Wednesday, June 13, 2012

আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের স্বরূপ


একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার শর্তাদি হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড- ও সীমান্ত, সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডের অধিবাসীদের স্বাধীন থাকার ইচ্ছা ও মানসিকতা, উক্ত ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সরকার বা শাসক, উক্ত দেশের থাকবে স্বাধীন বিচার বিভাগ, প্রতিরক্ষানীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি। উক্ত শর্তাদি বাস্তবে পূরণ হলেই একটি দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে মর্যাদালাভ করে। পক্ষান্তরে একটি দেশের যদি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকে কিন্তু সীমান্ত হয় অরক্ষিত, সরকার যদি হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাঁবেদার, প্রতিরক্ষানীতি হয় পরনির্ভরশীল, পররাষ্ট্রনীতি হয় নতজানু এবং অর্থনীতি হয় ভঙ্গুর ও শোষণের শিকার তবে উক্ত দেশকে কখনও স্বাধীন-সার্বভৌম বলা যায় না।


একটি দেশের জনগণকে তখনই স্বাধীন বলা যায়, যখন উক্ত দেশের সরকার হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম, নাগরিকদের যদি থাকে ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক্ স্বাধীনতা, বৈধ পথে সম্পদ অর্জন ও ব্যয়ের স্বাধীনতা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠের পছন্দমাফিক সরকার গঠন ও পরিবর্তনের অধিকার, মেধা ও যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পাওয়ার ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার এবং ধর্মীয়, রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ ও চর্চা করার অধিকার। দেশের নাগরিকগণ যদি উক্ত অধিকারসমূহের একটি থেকেও বঞ্চিত হয় তবে সে নাগরিক তার দেশে পরিপূর্ণ স্বাধীন তা বলা যাবে না।


উপরোক্ত মৌলিক শর্তাদির আলোকে আমরা যদি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে পর্যালোচনা করি তবে আমরা দেখতে পাই-
১. ভূখণ্ড ও সীমান্ত : ১৯৪৭ সালের ভূখণ্ড ও সীমান্ত নিয়েই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠিত হয়। ১৯৭১-পরবর্তী শাসক আমাদের বেরুবাড়ি ভারতকে প্রদান করেছে; কিন্তু বিনিময়ে প্রাপ্য আমাদের ছিটমহল ও করিডোরে আমরা এখনও সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে পারিনি। প্রতিবেশী ভারতের দাবির কারণে আমাদের সমুদ্রসীমা এখনও চিহ্নিত হয়নি। তদুপরি আমাদের সরকার প্রতিবেশী ভারতের মদদপুষ্ট শান্তিবাহিনীর নিকট দেশের এক-দশমাংশ ভূমি তুলে দেওয়ার আয়োজন করেছে। একতরফা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে ভারতের একক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বাঘ থেকে বিড়ালের স্তরে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমাদের ৫৪টি নদী পানির অভাবে মরা খালে পরিণত হতে চলেছে। এই হলো আমাদের ভূখণ্ড ও সীমান্তের হাল-হকিকত।


২. স্বাধীন থাকার ইচ্ছা ও মানসিকতা : বর্তমান সরকার সচেতনভাবে দেশের জনগণের স্বাধীন থাকার ইচ্ছা ও মানসিকতাকে ধ্বংস ও অবনমিত করার কর্মসূচি পালন করছে। স্বাধীন থাকার জন্য সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র বজায় রাখা অপরিহার্য। আমাদের সরকার আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বিপরীত সংস্কৃতি লালন-পালন করছে যাতে জনগণের স্বাতন্ত্রবোধ বিলুপ্ত হয়।


৩. স্বাধীন সরকার ও শাসক : দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী গঠিত সরকারই স্বাধীন সরকার হওয়ার পূর্বশর্ত। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চাপিয়ে দেয়া সরকারকে স্বাধীন সরকার বলা হয় না; বরং তাঁবেদার সরকার বলা হয়। বর্তমান সরকারটি তথাকথিত ১/১১-এর ফসল। আর ১/১১ সংগঠিত করেছিল সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা, ইসরাইল, ইউরোপ ও ভারত। এমতাবস্থায় সাম্রাজ্যবাদের চাপিয়ে দেয়া সরকার স্বাধীন সরকার নয়- সরকার প্রধানও স্বাধীন শাসক নয়। তাই সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নই এ সরকারের প্রধান কাজ।


৪. স্বাধীন বিচার বিভাগ : স্বাধীন বিচার বিভাগের পূর্বশর্ত হলো সৎ, যোগ্য, নীতিবান ও নিরপেক্ষ আইনমন্ত্রী ও বিচারক। বাংলাদেশের বর্তমান আইনমন্ত্রী নৈরাজ্যবাদী গণআদালতের সমন্বয়কারী ছিলেন, আইন প্রতিমন্ত্রী যখন এপিপি ছিলেন তখন হাইকোর্ট সুয়োমোটো রুল জারি করে তাঁকে এপিপি পদ থেকে অসততার দায়ে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। আর এই সরকার বিচার বিভাগে দলীয় ক্যাডার, খুনের আসামি ও প্রধান বিচারপতির এজলাসে লাথি মারার দায়ে দোষী ব্যক্তিকে পর্যন্ত বিচারক নিয়োগ করে বিচার বিভাগকে পক্ষপাতদুষ্ট ও চরম বিতর্কিত করেছে। ফলে বর্তমানে বিচার বিভাগ নৈরাজ্য সৃষ্টিতে ও অবিচার করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।


৫. প্রতিরক্ষানীতি : আমাদের প্রতিরক্ষা সামর্থ্যকে বিগত সাড়ে তিন বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, গোপালগঞ্জীকরণ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৎ, যোগ্য, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদেরকে হত্যা, নির্যাতন, বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত করে বিশ্বমানের এ বাহিনীকে পর্যুদস্ত করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্রয়ের ব্যাপারে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের উপর নির্ভরশীলতা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা সামর্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।


৬. পররাষ্ট্রনীতি : আধুনিক সরকারে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর পর যে গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে সেটি হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বর্তমান সরকার পররাষ্ট্র বিষয়ে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছে, বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পদায়ন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়েছে। একদেশ নির্ভর পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। বিপদের দিনে বন্ধুহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যা হয় বাংলাদেশের বেলায়ও তাই হবে।


৭. অর্থনীতি : সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার টার্গেটকৃত দেশের অর্থনীতি ধ্বংসকে প্রধান কর্তব্যকর্ম হিসেবে নির্ধারণ করে। দেশ ও জনগণ যদি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী থাকে তবে তারা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন মোকাবেলায় দৃঢ় অবস্থান নেয়। অপরদিকে ভুখা-নাঙ্গা জনগণ সামান্য খুঁদ-কুড়ার লোভে সাম্রাজ্যবাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। এ জন্যই অতীতে আমরা দেখেছি ১৭৫৭ সালের ২৩ জুনের পলাশী ষড়যন্ত্রের মাত্র ১৯ বছরে সমৃদ্ধ বাংলাকে দুর্ভিক্ষের বাংলায় পরিণত করে এক-তৃতীয়াংশ জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল, ১৯৭১ সাল-পরবর্তী তিন বছরে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে লাখ লাখ লোককে মেরে ফেলা হয় এবং বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করা হয়। একই লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ১/১১-এর পর থেকে অদ্যাবধি এদেশের ব্যক্তি পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অর্থনীতি ধ্বংসের অব্যাহত প্রক্রিয়া চালু রাখা হয়েছে। অর্থনীতির প্রধান প্রধান সেক্টরসমূহ ধ্বংস করে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন নিয়ম-কানুন তৈরি করে, ড্যাব, পরিবেশের অজুহাতে এবং নতুন গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে এদেশের সমৃদ্ধ আবাসন খাতকে ধ্বংস করে বর্তমানে ভারতের সাহারা গ্রুপের নিকট আবাসন খাতকে তুলে দেয়া হচ্ছে। শেয়ারবাজার, ইউনি-পে-টু ইউ, স্পীক এশিয়ার মাধ্যমে এদেশের জনগণকে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে। কৃত্রিম গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট তৈরি করে শিল্প-কারখানাকে ধ্বংস করে ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে, সম্ভাবনাময় গার্মেন্টস খাতে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রেখে ধ্বংস করা হচ্ছে, ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যমূলক পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে জনশক্তি রফতানি খাতকে সংকুচিত করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ বন্ধ করা হচ্ছে, মৎস্য, পোলট্রিশিল্পসহ সকল ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পকে ধ্বংস করে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এই হলো আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।


উপরোক্ত অবস্থার আলোকে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বর্তমানে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মান দ্রুত নিম্নমুখী হচ্ছে এবং আমরা পরাধীনতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছি।


পূর্বেই বলা হয়েছে, সার্বভৌম দেশ ও স্বাধীন সরকারই কেবলমাত্র জনগণের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। পক্ষান্তরে আধা স্বাধীন, আধা সার্বভৌম অথবা তাঁবেদার দেশ ও সরকার সাম্রাজ্যবাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে জনগণের স্বাধীনতা হরণ করে। এরূপ সরকার সাম্রাজ্যবাদীদের চোখ দিয়ে জনগণকে দেখে। এমতাবস্থায় তাঁবেদার সরকারের দৃষ্টিতে গোলামী মানসিকতার নাগরিকগণ হয় সরকারের বন্ধু এবং স্বাধীনচেতা নাগরিকগণ হয় সরকারের শত্রু। এরূপ সরকার প্রভুরাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য স্বাধীনতাকামী জনগণের অধিকার হরণে সদাসর্বদা তৎপর থাকে এবং একপর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদের মদদে নিজ দেশের জনগণের উপর হত্যা, নির্যাতন, গুম, খুন চাপিয়ে দেয় এবং দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।


বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের নাগরিক স্বাধীনতার স্বরূপ
১. ব্যক্তি স্বাধীনতা : আমি একজন ব্যক্তি। আমি আমার যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু আমার সে পথ বন্ধ। কেননা আমি সরকারি দল করি না, সরকারি দলের ক্যাডারদেরকে চাঁদা দিতেও রাজি নই। সুতরাং ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া আমার কপালে জুটবে না, কোনোভাবে ভর্তি হতে সক্ষম হলেও চাঁদা ব্যতীত হলে সিট পাবো না, চাঁদা না দিলে জানমালের নিরাপত্তা থাকবে না। এভাবে সরকারি, দল দলীয়কৃত প্রশাসন ও বিচার বিভাগ আমার নাগরিক স্বাধীনতাকে টুঁটি চেপে ধরছে।


২. বাক্ স্বাধীনতা : আমি আমার মনের কথাটা সমাজ ও রাষ্ট্রকে জানাতে চাই। কিন্তু উক্ত কথাটা যদি সরকারি লোকদের পছন্দ না হয় তবে আমাকে শারীরিক-মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হবে, মিথ্যা মামলা, হামলা, রিমান্ডের শিকার হতে হবে। সুতরাং আমাকে হয় বোকার মতো থাকতে হবে অথবা জুলুমের শিকার হতে হবে।


৩. বৈধ পথে সম্পদ অর্জন : আমি একজন দোকানদার বা ঠিকাদার। আমি সরকারি দলকে চাঁদা দেয়া ব্যতীত ব্যবসা করতে পারি না, টেন্ডারবাক্সে টেন্ডার জমা দিতে পারি না। কেননা ঠিকাদারীর কাজ পেতে হলে আমাকে সরকারি দলের ক্যাডার হতে হবে অন্যথায় ক্যাডারদের হাতে প্রাণ হারাতে হবে। সুতরাং বৈধ পথে সম্পদ অর্জনেও আমি স্বাধীন নই।


৪. চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার : আমি কঠিন রোগগ্রস্থ। প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নাই। সরকারি হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে ঘুষ দিতে হবে, সিট পেতেও ঘুষ লাগবে, চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার নেই হাসপাতালে। তারা হয় অনুপস্থিত অথবা বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি এর প্রতিবাদ করলে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের নেতাকর্মীদের দ্বারা হেনস্থা হতে পারি, অনভিজ্ঞ স্বাচিপ চিকিৎসকদের অবহেলা ও অপচিকিৎসায় মারা যেতে পারি। সুতরাং আমার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নেই।


৫. ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার : আমার বসতবাড়ি একব্যক্তি জোরপূর্বক দখল করে নিলো। আমি থানায় মামলা করতে গেলাম। দখলকারী যদি বিত্তশালী হয় অথবা সরকারি দলের লোক হয় তবে পুলিশ আমার মামলা গ্রহণ করবে না, মামলা নিলেও সঠিকভাবে চার্জশিট দেবে না, চার্জশিট দিলেও প্রতিপক্ষের ভয়ে সাক্ষীরা আদালতে গেল না, সাক্ষী যদিও যায় তবে দেখা গেল বিচারক ঘুষ খেয়ে আমার বিরুদ্ধে রায় দিলো অথবা আমার জীবদ্দশায় রায় দিলো না। এমতাবস্থায় আমার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কোথায়?


৬. পছন্দসই সরকার গঠনের অধিকার : আমি চাই আমার পছন্দের দল সরকার গঠন করুক। আমার দলকে আমি ভোটে বিজয়ী করতে চাই। আমি সরকারি দলের নজরে পড়লাম। ভোটের আগেই আমাকে মিথ্যা মামলায় জেলে নিয়ে গেল অথবা ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলো। এমতাবস্থায় আমার পছন্দসই সরকার গঠনের অধিকার থাকলো না।


৭. ধর্মচর্চা করার অধিকার : আমি একজন মুসলমান। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে চাই। আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামাজ আদায় করলে সরকারি দল মৌলবাদী বলে আমার উপর হামলা করলো। আমি সরকারি চাকরিজীবী, নামাজ-রোজা করার অপরাধে বরখাস্ত হওয়া, ওএসডি হওয়া এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি একজন সাধারণ নাগরিক। নামাজের সময় হওয়ায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশ করতে চাই। কিন্তু সহজে তা সম্ভব নয়। এদেশের মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডা পাহারায় কোনো পুলিশ না থাকলেও বায়তুল মোকাররম মসজিদ গেটে সারি সারি পুলিশ, রায়টকার, জলকামান সদা তৎপর। দুরু দুরু মনে মসজিদের গেটে ঢুকতে চাইলে দেখা গেল পুলিশ যন্ত্র দিয়ে, হাত দিয়ে আমার জামার নিচে লাদেন খুঁজছে। সুতরাং ছেড়ে দে মা-কেঁদে বাঁচি।


৮. জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার : বর্তমান বাংলাদেশে জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন। বেডরুমের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের কাজ নয়- এ কথাটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই জাতিতে জানিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন ২০-২৫টি খুন, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫-২০ জনের মৃত্যু এবং একাধিক গুমের ঘটনা ঘটছে। সুতরাং এখানে প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তদুপরি খালে, নদীতে, পাটক্ষেতে, ম্যানহোলে, পানির ট্যাংকে, ডোবায় প্রতিদিন বেওয়ারিশ লাশ পড়ে থাকে। যা ইতিপূর্বের কোনো সরকারের আমলে এত ব্যাপকভাবে দেখা যায়নি। একইভাবে পাড়াগাঁ থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত কোথাও আপনার মালের-সম্পদের নিরাপত্তা নেই। সরকারি দলের ক্যাডার, একশ্রেণীর পুলিশ স্বতন্ত্রভাবে ও ক্ষেত্রবিশেষে যৌথভাবে নাগরিকদের মাল-সম্পদ আত্মসাতে লিপ্ত রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে নির্দলীয়  বিরোধী দলীয় জনগণের বাগানের গাছ, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল অহরহ লুটপাটের শিকার হচ্ছে। শহরাঞ্চলে চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের সম্পদ লুটে নেয়া হচ্ছে। আর ইজ্জত! তার অবস্থা আরও করুণ। সরকারি দলের ক্যাডার, সন্ত্রাসী, মাস্তান- এমনকি শিক্ষকরাও মা-বোনদের ইজ্জত আবরু লুণ্ঠন করছে, তথাকথিত ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি এ সরকারের আমলে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।


৯. পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার : সরকারের তাবেদারী মনোভাব এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রতিবেশী দেশ নদীর পানি আটকে দিয়ে, আমাদের সমুদ্র এলাকায় বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে এদেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা সরকারি রাস্তার গাছ, পাহাড়ের গাছ, উপকূলীয় বনভূমির গাছ কেটে অবাধে পরিবেশ ও সম্পদের ধ্বংস করছে। নদীর পাড়, নদীর পাড়ের পাবলিকের জমি ডেজার দিয়ে কেটে মাটি বিক্রি করছে। পাহাড় কেটে পাহাড়ের মাটিও বিক্রি করছে। ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, নদী ভাঙনে ফসলি জমি-বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে, উপকূলীয় জনগণের নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সাধারণ জনগণের উপায় নেই এসবের প্রতিকার চাওয়ার- ন্যায় বিচার পাওয়ার।


এই হলো আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের বর্তমান বাস্তবতা। আমরা কি এরূপ অবস্থা অব্যাহতভাবে চলতে দিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবো- নাকি জান দেবো, তবু স্বাধীনতা ও অধিকার বিসর্জন দেবো না। আমাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে আমাদের ভবিষ্যৎ।