Saturday, March 31, 2012

কূটনীতিক খালাফ আল আলী হত্যাকাণ্ড- এবং বাংলাদেশে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনা...



৫ মার্চ সোমবার দিবাগত রাত ১.১৩ থেকে ১.১৫ মিনিটের  মধ্যে ঢাকাস্থ রাজকীয় সৌদি দূতাবাসের সিটিজেন্স্ এফেয়ার্স বিষয়ক কূটনীতিক খালাফ-আল-আলী নিজ বাস ভবনের ৫০ গজ অদূরে গুলিবিদ্ধ হন। প্রত্যক্ষদর্শী পর্তুগাল দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মী জুলফিকার আলী বলেন, তিনি রাত ১.১৫ মিনিটের সময় গুলির শব্দ শুনতে পান। শব্দ শুনে তিনি এবং অপর নিরাপত্তাকর্মী তালেব শব্দের দিকে এগিয়ে যান। তখন তারা দু’ব্যক্তিকে একটি সাদা প্রাইভেটকারযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে দেখেন। জুলফিকার আলী তাৎক্ষণাৎ থানায় খবর দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে আহত ও অচেতন কূটনীতিককে নিয়ে যায়। পুলিশের মতে, কূটনীতিককে সাথে সাথে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তাঁর বুকের বামপাশে গুলিবিদ্ধ ছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালের ডাক্তার খালাফ-আল-আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, খালাফ-আল-আলীর ফ্ল্যাটে নিরাপত্তাকর্মী তাপস রেমা জানান, আলী প্রতি রাতে জগিং করতে বের হতেন। প্রায় সময়ই তিনি সাইকেল নিয়ে বের হতেন। ঘটনার দিন তিনি ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমে তার সাইকেলটি নষ্ট দেখতে পান। এজন্য তিনি নিচের নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারীদেরকে বকাঝকা করে হেঁটে বেরিয়ে যান। তাঁর সাথে শুধু একটি মাম পানির বোতল ছিল। ব্যায়ামের পোশাক পরে বের হওয়ায় তিনি সাথে সেলফোন নেননি।


খালাফ-আল-আলীর মৃত্যুর ব্যাপারে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ভিন্ন। পুলিশ বলছে তাঁরা ঘটনার পরপরই হাসপাতালে নিয়ে যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে তারা রাত সাড়ে তিনটায় খালাফ-আল-আলীকে গ্রহণ করেন। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য কিছু বাস্তব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যথা-
১. পুলিশের বক্তব্য সত্য হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাত দেড়টা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কেন খালাফ-আল-আলীর দেহ থেকে গুলি বের করেনি। এই দীর্ঘ সময়ে তারা আহতকে কি কি চিকিৎসা দিয়েছিল। অপরদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সত্য হলে পুলিশ রাত সোয়া একটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত খালাফ-আল-আলীকে কোথায় রেখেছিল? তদন্তকারীরা কি এজন্য পুলিশ বা হাসপাতালকে জবাবদিহি করেছিল। এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন অমানবিক কাজের জন্য পুলিশ বা কোনো ডাক্তারের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? ব্যবস্থা নেয়া না হলে কি বুঝতে হবে সরিষার মধ্যে ভূত ছিল- নাকি এদেশের সাধারণ নাগরিকদের মতো খালাফ-আল-আলী পুলিশ ও ডাক্তারদের অবহেলা ও অবজ্ঞার শিকার হয়েছিল?
২. খালাফ-আল-আলী ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমে তাঁর সাইকেল নষ্ট হওয়ার কারণ জানতে কর্মচারীদেরকে বকাঝকা করেছিল। এতে বুঝা যায় তাঁর জানামতে তাঁর সাইকেলটি ভালো অবস্থায় ছিল কিন্তু কেউ না কেউ তাঁর সাইকেলটি অসাবধানতাবশত অথবা পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করে দিয়েছিল। এ বিষয়টি তদন্ত হয়েছে কিনা?
৩. তদন্তকারীরা তাপস রেমা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছে কি? যেমন তার জাতীয়তা, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, তার সাথে কোন কোন মহলের যোগাযোগ রয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
৪. গুলিবিদ্ধের ঘটনা রাত সোয়া একটা হলেও সিআইডির ক্রাইম সিনের কর্মকর্তারা পরদিন দুপুরে ঘটনার আলামত সংগ্রহে ঘটনাস্থলে যায়। এই বিষয়ে সিআইডির ক্রাইস সিনের কর্মকর্তা জানান, পুলিশ আমাদেরকে ঘটনার কথা সাথে সাথে জানালে আমরা তাৎক্ষণাৎ আসতাম। কিন্তু আমাদেরকে আজকে জানিয়েছে বিধায় আমরা আজকে আলামত সংগ্রহে এসেছি। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসায় অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। সিআইডি ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ বা গুলির খোসা পায়নি। বিষয়টি সন্দেহজনক নাকি রহস্যজনক তদন্ত করে দেখা দরকার। কেননা দীর্ঘ ১১ ঘণ্টায় কেউ আলামত সরিয়ে ফেলেনি এর নিশ্চয়তা কোথায়?
৫. খালাফ হত্যার আগে গোয়েন্দা সংস্থা কূটনৈতিক জোন নিয়ে বিভিন্ন আশঙ্কা প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- “একটি মহল সরকারকে বেকাদায় ফেলতে কূটনীতিক এলাকাকে টার্গেট করতে পারে।” ঘটনার তদন্তকারীরা উক্ত বিশেষ মহলকে তদন্তের অন্তর্ভুক্ত করেছে কিনা?
৬. কূটনীতিক এলাকার নিরাত্তাহীনতার কথা আগেই জানিয়েছিল ৪২টি দূতাবাস। সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তবুও এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি কেন? পুলিশের মতে, গুলশান এলাকায় সন্ত্রাসী সংখ্যা ৯২ জন; তন্মধ্যে ১২ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। বাকি ৮০ জন সন্ত্রাসীর ব্যাপারে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন? উক্ত ৮০ জন কি সরকারি দলের প্রভাবশালী সন্ত্রাসী?


খালাফ-আল-আলী হত্যার সম্ভাব্য কারণ-
তদন্তকারীরা সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে- ছিনতাইকারী, নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ও জনশক্তি রফতানিতে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সৌদি-বাংলাদেশ বিরোধ সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা। বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়। 
(ক) ছিনতাইকারী : ব্যায়ামের ড্রেস পরা ও মাম পানির বোতল হাতে পায়চারীরত ব্যক্তির নিকট যে কিছু পাওয়া যাবে না এটা একজন বোকা ব্যক্তিও বুঝে। সুতরাং এরূপ একজন কপর্দকশূন্য ব্যক্তিকে কোন ছিনতাইকারী টার্গেট করতে পারে না।
(খ) নিজেদের মধ্যে বিরোধ : খালাফ-আল-আলীর ভাই ও সৌদি নাগরিকদের মতে, খালাফ-আল-আলীর কোনো শত্রু ছিল না। তিনি যদি সৌদি সরকারের নিকট বিতর্কিত ব্যক্তি হতেন তবে তাঁর অতীত ক্যারিয়ারে তার ছাপ থাকত এবং তাঁর চাকরি অব্যাহত থাকত না। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি চলতি মাসেই তিনি রাজকীয় সৌদি দূতাবাস জর্দানে যোগ দেয়ার কথা চূড়ান্ত হয়েছিল। এমতাবস্থায় কারো সাথে ব্যক্তিগত বিরোধ থাকলে সে বিদায়ী ব্যক্তির ভালোয় ভালোয় প্রস্থানই কামনা করবে।
(গ) জনশক্তি রফতানিতে বাধা সৃষ্টি করা : হত্যাকাণ্ডের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে আমাদের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সৌদি আরব সফরে গিয়ে ফিরে এসে আশান্বিত ফলাফল জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, খুব শীঘ্রই একটি সৌদি প্রতিনিধি দল জনশক্তি রপ্তানী বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। এ খবরে সরকার এবং দেশের জনগণ আশান্বিত হয়েছিল দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশীদের জন্য সৌদি শ্রমবাজারের দরজা উন্মুক্ত হবে। এরূপ প্রেক্ষাপটে কূটনীতিক খুন বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার ধ্বংসের একটি নীলনকশা হওয়াটা অমূলক নয়।


উল্লেখ্য, ১/১১-এর অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে রাজনৈতিক কারণে সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরবর্তীতে ১/১১-এর ফসল বর্তমান সরকারের ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী কার্যকলাপ, আলেম-উলামাবিরোধী দমনাভিযানের কারণে সৌদি আরবের শ্রমবাজার দীর্ঘদিন বাংলাদেশের জন্যে বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশী শ্রমিকদের শূন্যস্থান পূরণে আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে। ৫ বছর পূর্বে মক্কার বৃহত্তম শ্রমিক কলোনীর প্রায় ৬ হাজার অধিবাসীর সবাই ছিল বাংলাদেশী, কিন্তু বর্তমানে উক্ত শ্রমিক কলোনীর অর্ধেক বাসিন্দাই হলো ভারতীয়। এতদসত্ত্বেও উক্ত কলোনী সংশ্লিষ্ট দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও বাংলাদেশীদের নিয়ন্ত্রণে। খালাফ-আল-আলী হত্যাকাণ্ডের পর উক্ত কলোনীর ভারতীয়রা তুচ্ছ কারণে বাংলাদেশীদের উপর হামলা করে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আমি নিজে গত নভেম্বর মাস মক্কায় অবস্থানে করে বাংলাদেশীদের নিকট শুনেছি কিভাবে ভারতীয়রা নিজেদের অপকর্ম বাংলাদেশীদের ঘাড়ে চাপিয়ে বাংলাদেশীদেরকে সৌদি আরব ত্যাগে বাধ্য করছে। এমতাবস্থায় খালাফ আলী হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধ্বংসের ভারতীয় চক্রান্ত মনে করাটা অমূলক নয়। এতদসত্ত্বে বিষয়টির ব্যাপারে আরও বৃহত্তর পর্যালোচনা দাবি রাখে। ঘটনাটির আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আরও ব্যাপক হওয়াটা বিচিত্র নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক হত্যাপ্রচেষ্টা ও দোষারোপ
১. ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের করাচী শহরে ২ জন বন্দুকধারী একজন সৌদি কূটনীতিককে হত্যা করেছিল।
২. ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টার দায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে অভিযুক্ত করেছে। 
৩. চলতি বছর ভারত, থাইল্যান্ড ও জর্জিয়ায় কর্মরত ইসরাইলী কূটনীতিকদের উপর হামলার চেষ্টা চালানোর জন্য ইসরাইল ইরানকে অভিযুক্ত করেছে। অথচ ইসরাইল অনেক ইরানী বিজ্ঞানীকে ইতোমধ্যে হত্যা করেছে।
৪. মার্চ-২০১২তে ঢাকায় সৌদি কূটনীতিক খালাফ-আল-আলীকে হত্যা করা হয়।


উপরোক্ত ৪টি তথ্যকে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হলে আমাদেরকে আমেরিকা ও ইসরাইলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং তাদের দোসর ইইউ ও ভারতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে। যায়নবাদী ইসরাইলের নেতৃত্বাধীন উক্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে মুসলিম বিশ্বকে টুকরো করা, গ্রাস করা ও লুণ্ঠন করাকে নিজেদের প্রধান কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে তারা মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে বিবাদ-বিসংবাদ, যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে তৎপর রয়েছে। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু দ্বন্দ্ব-সংঘাত, শাসক-শাসিতের দ্বন্দ্ব-সংঘাত লাগিয়ে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা করছে। যাতে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বে মুসলিম বিশ্ব শক্তিহীন হয়ে সাম্রাজ্যবাদী শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। এ সংক্রান্ত কয়েকটি তথ্য নিম্নরূপ-
(১) মার্কিন সরকারের পরামর্শদাতা রিচার্ড পার্ল, ডগলাস ফেইথ, ডেভিড ওরমসহ কয়েকজন ১৯৯৬ সালে “A clean break : A New strategy for securing the Realms” শিরোনামে একটি প্ল্যান প্রস্তুত করেন, যাতে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইরানের সরকার পরিবর্তনের নীলনকশা উপস্থাপন করা হয়।
(২) মার্কিন সামরিক জার্নালে প্রকাশিত মার্কিন কর্নেল রাল্ফ পিটার অংকিত Broader Middle East  প্ল্যান-এ দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কিভাবে সৌদি আরবসহ প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশকে টুকরো করে শক্তিহীন করে গ্রাস করবে। সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশকেও আপাতত তিন টুকরো করার প্ল্যান গ্রহণ করেছে। এ প্লানের সারকথা হলো- (১) তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে একটি খ্রিস্টান রাজ্য বানানো। (২) খুলনাসহ সাবেক ৬টি জেলা নিয়ে হিন্দুরাষ্ট্র বঙ্গভূমি। (৩) ঢাকা কেন্দ্রীক অবশিষ্ট অংশ নিয়ে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক হত্যার উক্ত ৪টি ঘটনাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও হত্যাকারীদের সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করতে পারি।
১. করাচী হত্যাকাণ্ড : ২ জন আঁততায়ী এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। সৌদি আরবের সাথে পাকিস্তানে দূরত্ব বৃদ্ধি পেলে লাভবান হবে তাদের শত্রুরা। কেননা সৌদি আরব পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ ও পরীক্ষিত বন্ধু। সৌদি আরবে রয়েছে পাকিস্তানের বিশাল শ্রমবাজার। উক্ত শ্রমবাজার থেকে পাকিস্তান বঞ্চিত হলে পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি ধ্বংস হবে এবং সাম্রাজ্যবাদীরা পাকিস্তানের উপর নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারবে। পাকিস্তানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার অপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।
২. যুক্তরাষ্ট্রে হত্যা প্রচেষ্টা : রিচার্ড পার্লের উক্ত প্ল্যানে আমরা দেখতে পেয়েছি ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের টার্গেটকৃত দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানে হামলার প্রকাশ্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ও হুমকি দিচ্ছে। ইরানকে পরাজিত করতে হলে সৌদি আরবের সাহায্য অতীব প্রয়োজন। এমতাবস্থায় সৌদি কূটনীতিক হত্যা চেষ্টায় ইরানের ঘাড়ে দোষ চাপালে ইরান-সৌদি বিরোধ আরও তীব্র হবে যা সাম্রাজ্যবাদীদের কাম্য।
৩. ইসরাইলী কূটনীতিক হত্যাপ্রচেষ্টা : যেসব দেশের সাথে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে সেসব দেশেই ঘটনাগুলো সংঘটিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর ঘটনার পরই ইরানকে দোষারোপ করা হচ্ছে। যায়নবাদী ইসরাইলের অপকৌশল সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল। তাদের মতে, ইসরাইল ঘটনাস্থলের বন্ধুরাষ্ট্রের দ্বারা তদন্ত করে ইরানের বিরুদ্ধে দলিল প্রস্তুত করে ইরানে হামলার একটি যুৎসই অজুহাত খুঁজে পাবে এবং ইরানী বিজ্ঞানী হত্যার দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করবে।
৪. ঢাকার হত্যাকাণ্ড : খালাফ-আল-আলীর হত্যা হত্যাকাণ্ডকে আমি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করি। কেননা এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিতাড়ন করা গেলে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। অভাব, দুর্ভিক্ষ ও রাজনৈতিক হানাহানি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে এবং উক্ত গৃহযুদ্ধ বন্ধে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি শান্তিরক্ষী নিয়ে সদলবলে হাজির হবে। ভবিষ্যতে চীন-ভারত-মার্কিন যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করা সহজ হবে।


বাংলাদেশে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনা
বাংলাদেশে এখন মৎস্য ন্যায় অবস্থা। এখানে এখন রাষ্ট্র-সরকার ও সরকারি দল একাকার। দেশের সকল সুযোগ-সুবিধা আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ কেবল মাত্র সরকারি দলের সেবায় নিয়োজিত। সরকার জনকল্যাণের পরিবর্তে প্রভুরাষ্ট্রের কল্যাণে সদা-সর্বদা সজাগ ও সতর্ক। কেননা প্রভুরাষ্ট্রসমূহ ১/১১-এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সরকার প্রধানকে বিপদ থেকে বাঁচাতে সামরিক হেলিকপ্টার পাঠানোসহ সম্ভাব্য সকল সাহায্য প্রদানের প্রকাশ্য ঘোষণা দিচ্ছে। ফলে সরকার দেশ-জনগণের কল্যাণের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজ দল ও প্রভুরাষ্ট্রের কল্যাণ কামনাকে নিজের পরবর্তী মেয়াদের ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রধান অবলম্বন মনে করছে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রের সকল বিভাগ এখন বিশৃঙ্খল ও বেসামাল হয়ে রাষ্ট্রকে অস্তিত্বের সংকটে নিমজ্জিত করেছে। নিজ দল,  সরকারের মন্ত্রী-এমপি অথবা প্রভুরাষ্ট্রের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো তদন্ত কার্যক্রম এদেশে বাধাহীনভাবে চলতে পারে না, তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। কয়েকটি তদন্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আলোচনা করলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে।
১. বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা হত্যাকাণ্ড: ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে ঢাকার পিলখানার বিডিআর হেডকোয়ার্টারে সংঘটিত এ ঘটনায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৩ ব্যক্তি নিহত হন। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হয়। সমকালীন পত্র-পত্রিকায় এতদসংক্রান্ত যে সব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা ছিল নিম্নরূপ :
ক. বিডিআর বিদ্রোহের উস্কানিদাতা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে বর্তমান সরকারের ৮ জন মন্ত্রী এমপি জড়িত ছিল। যাদের মধ্যে তিনজন প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়।
খ. মুখোশ পরিহিত বহিরাগতের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে যারা বিডিআরের সদস্য ছিল না। (The Daily Star, Dhaka, 5 March, 2009)
গ. ১২ জন ভারতীয় ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় এবং কাজ শেষে নিরাপদে ভারত প্রত্যাবর্তন করে। (দৈনিক সংগ্রাম, ঢাকা, ১৬ মার্চ, ২০০৯)। 
ঘ. ২ মার্চ ২০০৯ তারিখের হিন্দুস্থান টাইমস লিখেছে, “বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য করার জন্য ভারত আসামের জোড়াহাট বিমানঘাঁটিতে জঙ্গীবিমান মোতায়েন রেখেছিল এবং কলিকাতার নিকটস্থ কালাইকুন্তায় এক ব্রিগেড প্যারাসুট বাহিনী প্রস্তুত রেখেছিল।


উক্ত দেশবিরোধী হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রথমটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক, দ্বিতীয়টি সেনাবাহিনী কর্তৃক, তৃতীয়টি সিআইডি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। পত্রিকান্তরে আমরা জানতে পেরেছি, সরকার তদন্ত কমিটির ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল যাতে ঘটনার মদদদাতা, উস্কানিদাতা ও বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের ব্যাপারে তদন্ত করা না যায়। সেনা তদন্ত দলের সদস্যরা সরকারি শর্তাবলী মান্য করার ব্যাপারে ১০-০৫-২০০৯ তারিখে একটি হলফনামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এতদসত্ত্বেও সেনা তদন্তদলের তদন্ত রিপোর্ট, সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের ৭টি পৃষ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে।
২. শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি : ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকার শেয়ার বাজার লুট করেছিল। তখনকার তথ্য যা পাওয়া গিয়েছিল তা হলো- সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও ৩ জন মাড়োয়ারী ব্যবসায়ী উক্ত শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা ছিল। ২০১১ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারিতে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয় এবং ২ জন ইতোমধ্যে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট ও আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত রিপোর্টে মূল অপরাধীদের চিহ্নিত করা হলেও তারা সরকারের নিজস্ব লোক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 
সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড : মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী নিজেদের বাসায় খুন হলেও এ খুনের ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও বিচার বিভাগ অযাচিতভাবে এ ঘটনায় নাক গলিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার প্রধানের স্বার্থ অথবা সরকারের প্রভু রাষ্ট্রের স্বার্থ এখানে জড়িত আছে। এ ঘটনার ব্যাপারে ২ জন রাজনীতিকের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য-
(ক) ২৭-২-২০১২ তারিখে লালমনিরহাটের বিশাল জনসভায় বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “সাগর-রুনীর নিকট সরকারের দুর্নীতির গোপন তথ্য থাকায় উক্ত তথ্য আদায়ে সাগর-রুনীকে খুন করা হয়। হত্যার পর তাদের বাসা থেকে ল্যাপটপ ও মোবাইল ছাড়া আর কোনো বস্তু চুরি হয়নি। খুনীরা সরকারের ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ায় তাদেরকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।”
(খ) বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রেসক্লাবের সেমিনারে বলেছেন, সাগর-রুনী হত্যাকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তদন্তের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
৪. ১২ ও ১৪ মার্চ ২০১২-এর জনসভা : ৪ দলীয় জোট ঘোষিত ১২ মার্চের জনসভাকে বানচাল করতে সরকার তার সকল প্রশাসনিক ক্ষমতা ও বাহিনীসমূহকে ব্যবহার করেছে। সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অঘোষিতভাবে তিন দিন বন্ধ করা হয়েছিল। আবাসিক হোটেল, মোটেল, কমিউনিটি সেন্টার ও রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়। সরকারের নিকট ন্যায় বিচার চেয়ে লাভ হয়নি এবং নাগরিক অধিকার রক্ষায় হাইকোর্ট রিট করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
পক্ষান্তরে ১৪ মার্চের সরকারি জোটের জনসভা সফল করার জন্য সরকার প্রশাসন ও পুলিশকে প্রকাশ্যে ব্যবহার করেছে। সরকারি কর্মচারীরা প্রকাশ্যে ব্যানার নিয়ে উক্ত জনসভায় যোগদান করেছে। এ প্রসঙ্গে ১৫ মার্চের দৈনিক নয়া দিগন্ত শিরোনাম করেছে-
“বিরোধী দলের জন্যে রায়টকার-জলকামান সরকারি দলের জন্য বিশুদ্ধ পানি আর মোবাইল টয়লেট।” এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি দলের জনসভায় যোগ দিতে আসা কর্মীদের বাস-ট্রেনের ভাড়া দিতে হয়নি, পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি স্টেশনের তেল-গ্যাস ছিল ফ্রী। 


বর্তমান সরকারের এরূপ অপকর্ম-অবিচারের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। এরূপ অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের দেশে সৌদি কূটনীতিক খালাফ-আল-আলী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত যে আলোর মুখ দেখবে না, খুনীরা যে চিহ্নিত হবে না, শাস্তি পাবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায়। কেননা খালাফ হত্যাকাণ্ডে সরকারি দল, সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অথবা সরকারের কোনো প্রভুদেশ জড়িত থাকলে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কোনোদিন আলোর মুখ দেখবে না। আমার মনে হচ্ছে সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের মতোই খালাফ-আল-আলীর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রথমে পুলিশ করবে, পুলিশ ব্যর্থ হবে এবং তা ডিবিতে হস্তান্তরিত হবে, কিছুদিন পর ডিবি ব্যর্থ হবে এবং তদন্তভার সিআইডির কাছে ন্যস্ত হবে অতঃপর হিমাগারে চলে যাবে।

বাংলাদেশের করণীয় : বাংলাদেশ সরকার যদি নিজ দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় তবে তাকে অবশ্যই দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়ে দ্রুততম সময়ে বন্ধুপ্রতিম সৌদি কূটনীতিক হত্যারহস্যের সমাধান করতে হবে। হত্যাকারী চিহ্নিত করতে হবে। বিদেশি প্রভুদের নাম উচ্চারণ করতে ভয় পেলে প্রকৃত সত্যটি গোপনে সৌদি আরবকে জানিয়ে দিতে হবে। যাতে সৌদি আরব যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, সরকারের ভ্রান্তনীতির কবলে পতিত হয়ে দেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় যদি সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের রেমিটেন্সের উৎস বন্ধ হয়ে যায় তবে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে গত অর্থবছরে বাংলাদেশে আগত রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১১৬০ কোটি ডলার, তন্মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩৬০ কোটি ডলার, মধ্যপ্রাচ্যের জিসিসি দেশগুলো থেকে এসেছে ৩৮৬ কোটি ডলার এবং বাকি বিশ্ব থেকে এসেছে মাত্র ৪১৪ কোটি ডলার। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে রাজকীয় সৌদি দূতাবাসের একজন কর্মচারী নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব সকল থাই শ্রমিককে থাইল্যান্ডে ফেরত পাঠিয়েছিল।


সৌদি আরবের করণীয় : যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সৌদি আরবকে নিম্নের কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় আনতে অনুরোধ করব।
১. বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সৌদি আরবকে নিজেদের পুণ্যভূমি মনে করে এবং সৌদি আরবের ভালো খবরে খুশি হয়, মন্দ খবরে দুঃখ পায়। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তে বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামপ্রিয়- সৌদি আরবপ্রিয় জনগণ শক্তিহীন ও অসহায়। সুতরাং থাইল্যান্ডের ন্যায় আচরণ করলে এদেশবাসী অতিশয় দুঃখকষ্টে নিমজ্জিত হবে।
২. বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস মুছে দিয়েছে, তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ইহুদী-নাছারা ও মুশরিকদেরকে নিজেদের বন্ধু ও আত্মীয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। জনগণ নয়- ইসলামবিরোধী শক্তিই বর্তমান সরকারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এমতাবস্থায় এই সরকারের সদিচ্ছার উপর ভরসা না করে সৌদি আরবকে নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা অথবা বন্ধুপ্রতীম গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. আমার ব্যক্তিগত ধারণা হলো- বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বা সরকারি দল এই অপকর্মের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন হওয়ায় প্রভুদেশের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করার ব্যাপারে ক্ষমতাহীন ও ভীত।
৪. কূটনীতিক খালাফ-আল-আলী হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা না করে পাকিস্তানে সৌদি কূটনীতিক হত্যা, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি কূটনীতিক হত্যাপ্রচেষ্টা ও দোষারোপ, ভারত-থাইল্যান্ড ও জর্জিয়ায় ইসরাইলী কূটনীতিক হত্যাপ্রচেষ্টা ও দোষারোপের আলোকে বিচার করলে বিশ্বরাজনীতির আলোকে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সহজ হবে। এর মাধ্যমে দোষী ব্যক্তি বা শক্তিকে চিহ্নিত করে ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণ করা সহজ হবে।
৫. প্রাপ্ত তথ্যমতে খালাফ-আল-আলী চলতি মাসেই তাঁর নতুন কর্মস্থল জর্ডানের রাজধানী আম্মানে যোগ দেয়ার কথা ছিল। তাঁর জর্ডানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে ইসরাইল বা অন্য কোনো শক্তির স্বার্থ জড়িয়ে আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। 
৬. বাংলাদেশ এখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অভয়ারণ্য। তাঁবেদার সরকার রক্ষার নামে, দূতাবাস পাহারার অজুহাতে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের বাহানায় একাধিক সাম্রাজ্যবাদী দেশের সৈন্য ও বিশেষ বাহিনী এদেশে অবস্থান করার কথা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে। এমতাবস্থায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থে যে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারে।
পরিশেষে মরহুম খালাফ-আল-আলীর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।


২৮ মার্চ ২০১২  
সম্পাদকীয়ঃ মাসিক  ইতিহাস-অন্বেষা, এপ্রিল ২০১২
প্রবন্ধকার : সম্পাদক, ইতিহাস-অন্বেষা

Monday, March 12, 2012

এশিয়াকেই বিশ্বের নেতৃত্ব প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে





স্মরণাতীতকাল থেকে এশিয়া পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছে। পৃথিবীর সকল প্রাচীন সভ্যতা, সকল ধর্মের জন্মস্থান ও বিকাশের স্থান এশিয়া। এ জন্যই সকল ধর্মের মৌলিক প্রেরণা রয়েছে এশিয়ায়, অন্য কোনো মহাদেশে নয়। অন্যান্য মহাদেশ এশীয় ধর্মের অনুসারী। কিন্তু ধর্মের আবির্ভাব ও বিকাশ এশিয়ায় হওয়ায় ধর্ম, মানবতা, মানবিক সভ্যতার তীর্থস্থান এশিয়া। অন্যান্য মহাদেশে এশীয় ধর্ম পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগেছে, উক্ত দীর্ঘ সময়ে বেশিরভাগ ধর্মই বিকৃত হয়ে অন্যান্য মহাদেশে পৌঁছেছে। ফলে খাঁটি ধর্ম, মানবসভ্যতা, মানবিকতা সভ্যতা-ভব্যতার মৌলিক স্বাদ অপরাপর মহাদেশবাসীরা আস্বাদন করতে পারেনি। একারণেই মৌলিক মানবিক গুণাবলীসমূহ অপরাপর মহাদেশে খুব কমই দৃষ্টিগোচর হয়।স্পেন ও ইউরোপের আরো কিছু কিছু অঞ্চলে মুসলমান শাসনের ফলে ইউরোপ জেগে ওঠে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে একসময় মুসলমানদেরকে ছাড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে ইউরোপীয়রা পৃথিবীর দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছলে-বলে- কৌশলে এশীয়দের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং এশিয়ার দেশে দেশে অর্থ ও ক্ষমতালোভী একশ্রেণীর মানুষের সহযোগিতায় কালক্রমে এশিয়া ও অপরাপর মহাদেশে নিজেরা একাধিপত্য কায়েম করে। উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী হয়ে তারা মানবিক সভ্যতার স্থলে যান্ত্রিক ও অমানবিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে। লুণ্ঠন ও নৃশংসতাই ইউরোপীয় সভ্যতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, শালীনতা, সভ্যতা-ভব্যতার কবর রচিত হয়। তাদের দস্যুতা ও অমানবিকতা বিশ্বের প্রতিটি নিভৃত কোনের জনগোষ্ঠীকে বর্তমানে সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত করেছে। এ দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে হলে বিশ্বের নেতৃত্বে আসীন হতে হবে এশীয়দেরকে। তবেই বিশ্বে শান্তি ফিরে আসবে।

বর্তমানে বিশ্ব নেতৃত্বের পালাবদলের সময় এসেছে। অগ্রসর চিন্তার ক্ষেত্রে এশিয়াও ক্রমান্নয়ে ইউরোপের সমকক্ষতা অর্জন করেছে। এশিয়ার সচেতন নাগরিকগণ বর্তমানে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে যে, এশিয়ার সকল অশান্তির মূলে রয়েছে যায়নবাদী ইসরাইল ও তার বরকন্দাজ ইউরোপ এবং আমেরিকা। যায়নবাদীদের বিশ্বশাসনের আকাংখা এবং ইউরোপ-আমেরিকার লুণ্ঠনবৃত্তিই মূলত সমগ্র পৃথিবীর অশান্তির জন্য দায়ী। যায়নবাদীদের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা Protocol of the Elders of the Zion- এর অনুসরণে রচিত মনরো ডকট্রিন, আইসেন হাওয়ার ডকট্রিন, হিটলারের মাইন ক্যাম্প পৃথিবীকে ২টি বিশ্বযুদ্ধ এবং অসংখ্য যুদ্ধে লিপ্ত করেছে। ১৯৪৭ সালে বৃটিশরা ভারতবর্ষ থেকে বিদায় নেয়ার সময় এদেশে কিছু ভাবশিষ্য রেখে যায় যারা রচনা ও চর্চা করছে নেহেরু ডকট্রিন, গুজরাল ডকট্রিন তথা দি ইন্ডিয়া ডকট্রিন। উক্ত Protocol ও ডকট্রিনের মূল কথা হলো অপরাপর জাতিকে হত্যা-লুণ্ঠনের মাধ্যমে নিজ জাতির সমৃদ্ধি ও আধিপত্য বিস্তার করা।

সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য, পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমি হিসেবে পরিণত করার জন্য উপরোক্ত Protocol ও ডকট্রিনের অনুসারীদের নিকট থেকে বিশ্বের নেতৃত্ব কেড়ে নিতে হবে এবং মানবীয় সভ্যতার পাদপীঠ এশিয়াকে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে আসীন করতে হবে। এশিয়া বর্তমানে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে আসীন হওয়ার যোগ্যতা ও ক্ষমতা অর্জন করেছে তবে উক্ত যোগ্যতা ও সামর্থ্য সমন্বিত রূপলাভ করেনি। ক্ষমতা ও সামর্থ্যরে সমন্বয় করার জন্য প্রয়োজন একটি থিংকট্যাংক যা নিউক্লিয়াসের ন্যায় ভূমিকা রাখবে এবং লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাবে। এশিয়ার সমর্থ্য ও করণীয় সম্পর্কে এশিয়ার দুইজন অর্থনীতিবিদের বক্তব্য নিমড়বরূপ-
আগস্ট ০৯ সালে মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে অনুষ্ঠিত 'Conference on the effects of
the Global economic crisis on Asia' শীর্ষক সম্মেলনে চীনের ব্যাংকিং রেগুলেটরি কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা দাতুক সেরি আঞ্জুসের ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ওয়াই-ভি-রেড্ডি বলেন, “বিশ্বের মোট মজুদ মুদ্রার ৬৭%, মোট জনসংখ্যার ৫৫% এবং বিশ্ব জিএনপি (GNP)’র উল্লেখযোগ্য অংশ এশিয়ার হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের প্রভাবশালী ২টি ঋণসংস্থা ও সংবাদ সংস্থার মালিক পশ্চিমারা। এশিয়া যদি নেতৃত্ব দিতে চায় তবে এশীয় ঐক্য অপরিহার্য এবং এশিয়ায় একটি থিংকট্যাংক, ঋণসংস্থা ও সংবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।সূত্র : স্টার, মালয়েশিয়া, ২৪.০৮.২০০৯)।

উপরোক্ত দুইজন অর্থনীতিবিদের প্রস্তাবিত এশীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদেরকে প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে এশিয়ার ঐক্যের বাধাসমূহ কি কি? এশিয়ার বর্তমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তপাত, উদ্বাস্তু সমস্যা, অমানবিক কার্যকলাপ কি এশীয়দের স্বার্থে হচ্ছে- নাকি আমেরিকা, ইসরাইল ও ইউরোপের স্বার্থে হচ্ছে? এশিয়ার ভূখণ্ডে বসবাস করে ইউরোপীয়দের স্বার্থে কাজ করছে কোন গোষ্ঠী ও কোন দেশ? এর সহজ-সরল উত্তর হলো এশিয়ার তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীসমূহ শুধুমাত্র অর্থ ও ক্ষমতার লোভে নিজ দেশ ও জাতির সুখ-সমৃদ্ধি ইউরোপীয়দের হাতে তুলে দিচ্ছে। এশিয়ার একটি মাত্র দেশ ভারত নিজের আগ্রাসী মনোবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য ইউরোপীয়দের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে ও ইউরোপীয় অস্ত্রে এশিয়ায় রক্তপাত ঘটাচ্ছে এবং ভয়াবহ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এশিয়ার অপরাপর দেশসমূহ শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করছে এবং যুদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। ভারতের এরূপ অর্বাচীন কার্যকলাপ অব্যাহত থাকলে সমগ্র এশিয়ায় যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে, যাতে ভারত নিজেও পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

পাঠকবৃন্দ! যদি এমন হতো যে, ভারত তার আগ্রাসী পরিকল্পনা থেকে সরে এলো এবং ইউরোপ-আমেরিকা-ইসরাইলের সাথে যুক্ত হয়ে এশিয়ায় ক্ষতি করার মনোবৃত্তি পরিত্যাগ করলো। এমতবাস্থায় পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই আমেরিকা-ইউরোপ ও তাদের রোপিত বিষবৃক্ষ ইসরাইল এশিয়া থেকে পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য হবে। বিশ্ববাসী ইতিমধ্যে লক্ষ্য করেছে যে, অর্থনীতি ও জনসংখ্যা স্বল্পতায় আমেরিকা-ইউরোপ পতণোন্মুখ। ইরাক-আফগানিস্তানে ইউরোপ-আমেরিকার অস্ত্রের কার্যকারিতা পরখ হয়ে গেছে। হামাস-হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলি সক্ষমতার পরীক্ষা হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় পতণোন্মুখ আমেরিকা- ইউরোপের পতন ঠেকাতে দরিদ্র কিন্তু উদীয়মান ভারত নিজের পতন ডেকে আনছে কেন? ভারত যদি যুদ্ধ প্রস্তুতির বদলে নিজ দেশের জনগণের জীবনমান উন্নত করার প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করে তবে ভারতের সাধারণ জনগণ চরম দারিদ্র্যসীমা থেকে মুক্ত হয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনে সক্ষম হতো, ভারতের সকল রক্তপাত ও গৃহযুদ্ধ বন্ধ হতো এবং ভারতের প্রতিবেশীরা শান্তিতে ঘুমাতে পারতো। আমেরিকা ও ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক হালচাল সংক্ষেপে নিম্নরপঃ

মার্চ ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রিজার্ভ ফান্ডে দেনার পরিমাণ ১১ ট্রিলিয়ন ডলার। তন্মধ্যে বিদেশীরা পাবে ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। উক্ত দেনার পরিমাণ নিমড়বরূপ- ১. জাপান- ৬৮৬.৭ বিলিয়ন ডলার। ২. চীন- ৭৭৬.৯ বিলিয়ন ডলার। ৩. ক্যারিবীয় দেশসমূহ- ২১৩.৬ বিলিয়ন ডলার। ৪. ভারত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক- ২০৪ বিলিয়ন ডলার। ৫. মিসর, ইসরাইল, ইতালি, নেদারল্যান্ড, থাইল্যান্ড- ১২৪.৩ বিলিয়ন ডলার। ৬. আলজেরিয়া, বাহরাইন, ইকুয়েডর, গ্যাবন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলা- ১৯২ বিলিয়ন ডলার। ৭. বেলজিয়াম, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সুইডেন- ৮৯.৫ বিলিয়ন ডলার। ৮. ব্রাজিল- ১২৬.৬ বিলিয়ন ডলার। ৯. লুক্সেমবার্গ- ১০৬.১ বিলিয়ন ডলার। ১০. জার্মানি- ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১১. বৃটেন- ১২৮.২ বিলিয়ন ডলার। ১২. আয়ারল্যান্ড- ৫৪.৭ বিলিয়ন ডলার। ১৩. তাইওয়ান- ৭৪.৮ বিলিয়ন ডলার। ১৪. হংকং- ৭৮.৯ বিলিয়ন ডলার। ১৫. সুইজারল্যান্ড- ৬৭.৭ বিলিয়ন ডলার। ১৬. রাশিয়া- ১৩৮.৪ বিলিয়ন ডলার। ১৭. অন্যান্য দেশ- ১৫৬.৭ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, অক্টোবর ২০০৯ পর্যন্ত চীনের নিকট যুক্তরাষ্ট্রের দেনার পরিমাণ হয়েছে ৮৪০ বিলিয়ন ডলার (আল-জাজিরা : ২০.১০.০৯)। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আরো ঋণ সংগ্রহ করেছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার বন্ড বিক্রয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

<b>ভারতের দারিদ্র্য</b>
দিল্লি সরকার পশ্চিমের কয়েকটি রাজ্যের সমৃদ্ধির জন্য বাকি রাজ্যগুলোকে শোষণ করছে। বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, কাশ্মীর রাজ্যের জনগণের মাথাপিছু আয় অপেক্ষা মহারাষ্ট্র, গুজরাট, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও কেরালা রাজ্যের জনগণের মাথাপিছু আয় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর স্থানীয় জনগণের আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতের ৮৫.৭% লোকের দৈনিক আয় ২.৫ ডলারের নিচে এবং ৪১.৬ ভাগ লোকের আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে অর্থাৎ ১.২৫ ডলার। বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুর রহমান ৮/৯/০৯ সালে দৈনিক নয়াদিগন্তে লিখেছেন, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭৬% চরম দরিদ্র। ঋণের দায়ে ও অনাহারে বিগত ১০ বছরে ভারতের ২ লাখ কৃষক আত্মহত্যা করেছে। বর্তমানে প্রতি আধঘণ্টায় একজন কৃষক আত্মহত্যা করে।

উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, পরের ধনে পোদ্দারি করা আড়তদার আমেরিকা যদি লুটপাট করার সুযোগ না পায় তবে অচিরেই নব্বইয়ের দশকের সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাগ্যবরণ করবে। আর ভারত হচ্ছে সর্বাঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত সুন্দর মুখ-মণ্ডলের মানুষের ন্যায় যার উপরের অংশই শুধু সুন্দর।
মানবজাতির সুখ-সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য যান্ত্রিক ও পাশবিক সভ্যতার ধারক-বাহক পাশ্চাত্যের নিকট থেকে মানবিক সভ্যতার অধিকারী প্রাচ্যকে বিশ্ব নেতৃত্বে আসীন হতে হবে। এ জন্য প্রাচ্যের বুদ্ধিজীবী ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাচ্যের স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রনায়করা যদি এ লক্ষ্যে সুচিন্তিত পদক্ষেপে অগ্রসর হয়ে জনগণকে সচেতন করে তবে জনগণ পাশ্চাত্যের আজ্ঞাবহ- অর্থ ও ক্ষমতালোভী সেবাদাসদেরকে ক্ষমতার মসনদ থেকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে এবং পাশ্চাত্যের স্বার্থে প্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দেশ ও গোষ্ঠীকে সমুচিত শিক্ষা দেবে। এরূপ আকাংখা এ মুহূর্তে অসম্ভব মনে হলেও বাস্তবে অপশক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। নইলে পৃথিবীতে মানবজাতি এতদিন টিকে থাকতে সক্ষম হতো না।

০১/১০/২০০৯

সম্পাদকীয়ঃ ইতিহাস অন্বেষা ডিসেম্বর ২০০৯।