Monday, January 2, 2012

সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার সরকার এবং গৃহযুদ্ধ (প্রথম প্রকাশ জানুয়ারী ২০১২ সংখ্যা,মাসিক ইতিহাস অন্বেষা)



প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে শক্তিশালী রাজা-বাদশাহ-একনায়ক কর্তৃক দুর্বল প্রতিবেশী দেশ দখল ছিল স্বাভাবিক বিষয়। তখন ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিই কার্যকর ছিল। সে সময় বিশাল আকারের ভূমির মালিক রাজশক্তি দূরবর্তী এলাকায় দখলিকৃত ভূখণ্ডে আশ্রিত রাজ্য ও করদ রাজ্য স্থাপন করত। ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী দেশ দখল প্রক্রিয়া আধুনিকতার মুখোশ পরে এবং দখলে রাখার চেয়ে বিভিন্ন কৌশলে টার্গেটরত দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করার নীতি গ্রহণ করে। এ নীতিকে বৈধতা দেয় সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট জাতিসংঘ। এভাবে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। প্রাচীনকালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দখলিকৃত দেশের জনগণের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের ব্যাপারে কম-বেশি যত্নবান ছিল কিন্তু তথাকথিত আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি টার্গেটকৃত দেশের জনগণের সুখ-দুঃখ ভালো-মন্দ বা জীবনমৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের লক্ষ্যের কেন্দ্র বিন্দু হলো সংশ্লিষ্ট দেশকে লুণ্ঠন করা, গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দেশের জনগণকে নিশ্চিহ্ন বা ভূমিদাসে পরিণত করে ভূখণ্ড-টি অবাধে ব্যবহার করার অধিকার লাভ করা। এ জন্য বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সংশ্লিষ্ট দেশে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অথবা জোরপূর্বক তাবেদার শক্তি প্রতিষ্ঠা করে উক্ত তাবেদারকে দিয়ে দেশপ্রেমিকদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে গৃহযুদ্ধ বাধায় এবং গৃহযুদ্ধ বন্ধের অজুহাতে সংশ্লিষ্ট দেশে বহুজাতিক বাহিনী অথবা জাতিসংঘ বাহিনী প্রেরণ করে। উক্ত বাহিনীর কাজ হলো তাবেদার পুতুল সরকারকে রক্ষা করা এবং সাম্রাজ্যবাদী লুটপাট নির্বিঘ্ন করা। শোষণলুণ্ঠন নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে তাবেদার সরকারের অনুষঙ্গ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশে গৃহযুদ্ধ অনিবার্যভাবে সংগঠিত হয়। কেননা সংশ্লিষ্ট জাতির আত্মমর্যাদা সম্পন্ন স্বাধীনচেতা জনগণ তাবেদার সরকার ও তার প্রভুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।


বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মানসিকতা :
বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির গডফাদার হলো যায়নবাদী ইসরাইল, গডফাদারের বরকন্দাজরা হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও বর্ণবাদী ভারত। বর্ণবাদী ইহুদী ও বর্ণবাদী ব্রাহ্মণ্যবাদের মানসিকতা প্রায় একই অর্থাৎ “ভিন্ন বর্ণের জনগণের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়াতে কোনো পাপ নেই, কেননা তাদের বিধাতার নিয়ম হলো- নিম্নবর্ণের জনগণের কোনো সম্পদ থাকা অপরাধ।” যুক্তরাষ্ট্র ও সাদা চামড়ার ইউরোপীয়দের মানসিকতা বোঝার জন্য নিম্নে তাদের কয়েকটি বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করা হলো :
১. “মৃত ইন্ডিয়ানদের চেয়ে ভালো ইন্ডিয়ান আমি আর কখনও দেখিনি” (আমেরিকার মাটি থেকে রেড ইন্ডিয়ানদের নিশ্চিহ্ন করার যুদ্ধে নিয়োজিত জেনারেল শেরিডানের উক্তি। এটা বর্তমানে আমেরিকানদের জনপ্রিয় প্রবচন)। (সূত্র : বই, আমারে কবর দিও হাঁটুভাঙ্গার বাঁকে, মূল : ডি ব্রাউন, অনুবাদ : দাউদ হোসেন, পৃ-১৪৮), ১ম সংস্করণ-১৯৯৭।
২. মার্কিন সেনাপতি, শিল্পপতি ও কংগ্রেসম্যান নিজেদের অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থে বিশ্বে যুদ্ধ জিইয়ে রাখবে। (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মার্কিন সেনাপতি ও পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইসেন হাওয়ার)।
৩. আগামীকাল যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাসাগরে ডুবে বিলীন হয়ে যায় তবুও মার্কিন সামরিক শিল্প টিকে থাকা চাই আগের মতো, যে পর্যন্ত না অন্য কোনো প্রতিপক্ষ আবিষ্কার করা যায়। (উল্লেখ্য, বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্ধারণ করেছে উদীয়মান মুসলিম বিশ্ব ও চীনকে।) (জন কেনান, স্নায়ুযুদ্ধের রণকৌশলবিদ)
৪. আমরা বোমা বানাতে চাই- তাই আগে শত্রু বানাই। (স্যার সাইমন জেন্কিন্স, দি টাইমস এবং লন্ডন ইভিনিং-এর সাবেক সম্পাদক।)
৫. শান্তি দুর্বলের জন্য, প্রকৃত মানুষেরা বোমা কেনে আর সেগুলো উপর থেকে ফেলে। (মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস এর বিদায়ী ভাষণ থেকে) উল্লেখ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন যতদিন কম্যুনিস্ট শাসনাধীন ছিল ততদিন তারাও সাম্রাজ্যবাদী ছিল। সমাজতন্ত্রের তাত্ত্বিক কার্ল মার্কস থেকে শুরু করে রুশ কম্যুনিস্টদের প্রায় সকল নেতাই ছিল যায়নবাদী ইহুদী।
উপরোক্ত ৩ ও ৪নং উক্তির অনুষঙ্গ হিসেবে মার্কিন বুদ্ধিজীবী হান্টিংটন রচনা করে “সভ্যতার সংঘাত” থিওরী। সোভিয়েত ইউনিয়নের সলিল সমাধির পর হান্টিংটনের নির্দেশনা মোতাবেক উদীয়মান মুসলিম বিশ্ব ও চীন হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নতুন প্রতিপক্ষ। তখন থেকে বোমা বানিয়ে উপর থেকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের উপর এবং একশ্রেণীর নামধারী মুসলিম, (যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, ধর্ম ব্যবসায়ী ও কম্যুনিস্ট হিসেবে পরিচিত) সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দোসর ও তাবেদার হিসেবে নিজ দেশ ও জনগণকে সীমাহীন দুর্দশায় নিমজ্জিত করেছে ও করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি চীনকেও চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।


বর্তমান সাম্রাজ্যবাদীদের মুসলিম দেশ দখল প্রক্রিয়া :
যায়নবাদী ইহুদীগণ কর্তৃক রচিত উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন মতবাদ যথা- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মতবাদ, সমাজতান্ত্রিক মতবাদ, ডারউইনিজম, ভৌগোলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত জাতীয়তাবাদী মতবাদসমূহ এবং বস্তুবাদী ও ভোগবাদী সভ্যতা উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্বের প্রতিটি দেশে নীতি-নৈতিকতাহীন পাশ্চাত্যপন্থী অসংখ্য তাবেদার সৃষ্টি হয়। চরিত্রহীন, লম্পট, মদ, নারী ও নেশায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত এসব মেরুদ-হীন লোভী ব্যক্তিদেরকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দেশে বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে প্রতিষ্ঠিত করে। সময় সুযোগ মতো এদেরকে অর্থ-বিত্ত ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিজ দেশ ও জনগণের সর্বনাশ সাধনে কাজে লাগায় এবং এদেরকে দিয়ে তাবেদার সরকার ও দল গঠন করে। যে সকল সেক্টর থেকে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের এজেন্ট রিক্রুট করে তা হলো :
নৈরাজ্যবাদী কম্যুনিস্ট, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী দল ও গোষ্ঠী, জাতিসংঘ-বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-আমেরিকান সিটি ব্যাংক-এর সংশ্লিষ্ট দেশের কর্মচারী, সাম্রাজ্যবাদী দেশ কর্তৃক পরিচালিত বহুজাতিক কোম্পানি ও এনজিওর কর্মচারী, গোত্রীয় জাতিগত ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, পাশ্চাত্যপন্থী বুদ্ধিজীবী, চরিত্রহীনলম্পট-অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তি, পলাতক সন্ত্রাসী, নেশাখোর ব্যক্তি, দুর্নীতিপরায়ণ ও লোভী রাজনীতিক-সামরিক কর্মকর্তা- আমলা ও ব্যবসায়ী, যায়নবাদী ইহুদীগণ কর্তৃক পরিচালিত লায়ন ও রোটারী ক্লাব সদস্য, কাদিয়ানী ও বাহাই সম্প্রদায়, ইসকন,ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লাহ, সংখ্যালঘু ফেরকার লোকজন যথা- বিদেশী মদদপুষ্ট পীর-ফকির-কবর পূজারী-মাযার পূজারী ইত্যাদি সেক্টরের স্বদেশী ব্যক্তিবর্গ। বর্তমান বিশ্বের সকল তাবেদার দল ও সরকারের শ্রেণীচরিত্র একই। সাম্রাজ্যবাদীরা সব সময় সংখ্যালঘু ও চরিত্রহীনদের নিয়ে তাবেদার দল ও সরকার গঠন করে। যাতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে গঠিত সরকার সংখ্যাগুরুদের ভয়ে সাম্রাজ্যবাদের পক্ষপুটে আশ্রয় নিয়ে করদ রাজ্যে বা আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি প্রমাণিত হবে-
১. আমাদের ফখরুদ্দীন, ভারতের মনমোহন সিং, আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই ও ইরাকের নূরী আল মালিকী বিশ্বব্যাংক ও বহুজাতিক কোম্পানি কর্মকর্তা ছিলেন।
২. ভারত ত্যাগের প্রাক্কালে সাম্রাজ্যবাদী বৃটেন ভারতের সংখ্যালঘু ব্রাহ্মণদের নিকট (যারা তখন ছিল ৭% এবং বর্তমানে ৯%) ভারতের শাসনভার হস্তান্তর করে। এই সংখ্যালঘুরা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯১% লোকের ভয়ে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা-ইসরাইল ও বৃটেনের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত।
৩. ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিভিন্ন দেশে যাদেরকে
ক্ষমতাসীন করে তারা ছিল সংখ্যালঘু। যথা-
(ক) সিরিয়ায় যে হাফেজ-আল আসাদ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয় সে সরকারের শাসক সম্প্রদায়, বড় ব্যবসায়ী ও সামরিক কর্মকর্তারা আলভী শিয়া (মাত্র ৭%) অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সুন্নি মতাবলম্বী।
(খ) বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ শিয়া কিন্তু শাসক সম্প্রদায় সুন্নি।
(গ) মিসরের চলমান নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে- সে দেশের ৬৫% জনগণ ইসলামপন্থী; এমতাবস্থায় মিসরে যাতে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতাসীন হতে না পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। ফিলিস্তিন ও আলজেরিয়ার ইতিহাসও একইরূপ।


তাবেদার সরকারের দেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর নিয়ম :
পূর্বেই বলা হয়েছে কিরূপ শ্রেণীচরিত্রের লোকজন দিয়ে টার্গেটকৃত দেশে তাবেদার দল, জোট ও সরকার গঠন করা হয়। যেহেতু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদেরকে দিয়ে তাবেদার সরকার গঠন করা হয় সেহেতু সংখ্যাগুরু দেশপ্রেমিক জনগণ তাবেদার সরকার ও তার প্রভুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় তাবেদার সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সাম্রাজ্যবাদের সাথে দেশবিরোধী গোলামী চুক্তি করে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদাকে সাম্রাজ্যবাদের পদতলে বিসর্জন দেয়। এমতাবস্থায় সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু দ্বন্দ্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় প্রভু রাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তাবেদার সরকার এমন সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা দেশকে গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত করে। পদক্ষেপসমূহ হলোঃ
১. দেশপ্রেমিক জনগণের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন অজুহাতে আটক করে এবং বিচারের নামে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
২. সংখ্যাগুরু দেশপ্রেমিক শক্তিকে শক্তিহীন করার জন্য দেশব্যাপী গুপ্তহত্যা, গুম, হামলা-মামলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
৩. পারিবারিকীকরণ, গোত্রীয়করণ, আত্মীয়করণ ও দলীয়করণের মাধ্যমে দেশের সামর্থ, সম্ভাবনা, বিশ্বাসযোগ্যতা, সুশাসন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে এবং দেশ দুর্বল ও পঙ্গু হয়ে সাম্রাজ্যবাদের আকাংখা  পূরণ করতে বাধ্য হয়।
৪. সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তি করে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। প্রতিবাদীদেরকে কঠোরহস্তে দমন করা হয়, মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়, দেশপ্রেমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় এবং মরণপণ প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়।
৫. প্রতিরোধ আন্দোলন নস্যাত করার জন্য বিভিন্ন কৌশলে মধ্যবিত্তের কোমর ভেঙে দেয়া হয়, লুটপাট ও অর্থপাচারের মাধ্যমে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করা হয় যাতে দেশে দুর্ভিক্ষ, অস্থিতিশীলতা ও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
৬. আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে সাম্রাজ্যবাদের অনুকূলে সাজানো হয়, যাতে দেশপ্রেমিক সুনাগরিকরা কোথাও আশ্রয় বা বিচার না পায়। দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমন তাবেদার সরকারের স্থায়ী নীতিতে পরিণত হয়।
৭. সাম্রাজ্যবাদের আশীর্বাদপুষ্ট তাবেদার সরকারটির জনপ্রিয়তা তলানীতে এসে পৌঁছলে অস্বাভাবিকভাবে প্রধান তাবেদারকে সরিয়ে অধিকতর খারাপ ও নৃশংস অপর তাবেদারকে ক্ষমতাসীন করে সরকার গঠন করা হয়। এমতাবস্থায় গৃহযুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়।


টার্গেটকৃত দেশকে কেন গৃহযুদ্ধে নিক্ষেপ করা হয়
১. টার্গেটকৃত দেশকে ভিতর থেকে ধ্বংস করা এবং দেশের প্রতিরোধ শক্তিকে ধ্বংস করাই এর প্রধান লক্ষ্য।
২. সাম্রাজ্যবাদীদের দরকার দেশটির সম্পদ ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান। দেশটির জনগণ কতজন আহত-নিহত-পঙ্গু-বিধবা ও উদ্বাস্তু হলো তা দেখার দায়িত্ব সাম্রাজ্যবাদীদের নয়।
৩. নিরাপত্তাহীনতায় নিমজ্জিত ও ভবিষ্যতে বিচারের সন্মুখীন হওয়ার ভয়ে ভীত দুর্বল তাবেদার সরকারের উপর অনবরত চাপ সৃষ্টি করে বেশি বেশি স্বার্থ হাসিল করা।
৪. গৃহযুদ্ধ থামানোর নামে জাতিসংঘ বাহিনী বা আঞ্চলিক বাহিনী নিয়ে টার্গেটকৃত দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক অবস্থান দখল করা ও সর্বাত্মক লুণ্ঠনকে স্থায়ী করা।


তাবেদার সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
১. যে সরকার দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয় এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও চাহিদা পূরণকে অগ্রাধিকার দেয়।
২. এ সরকারের বিদেশনীতি ও বাণিজ্যনীতি প্রণীত হয় সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খার অনুকূলে এবং দেশ ও জনগণের আশা-আকাংখা, লাভ-ক্ষতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিকূলে। তাবেদার সরকারের প্রধান শিখণ্ডী, তার পরিবার ও দলের অনুকূলে এবং দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতিকূলে।।
৩. এ সরকার নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থ চাপিয়ে দেয় রাষ্ট্রের ঘাড়ে।
৪. সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নাগরিকরা এ সরকার কর্তৃক নির্মম-নিষ্ঠুর নিপীড়নের শিকার হয় এবং লোভী, অসৎ, চোর- ডাকাত সমাজ ও দেশবিরোধীরা হয় পুরস্কৃত।
৫. এ সরকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে বিভিন্ন গোলামী চুক্তিতে দেশকে আবদ্ধ করে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো তাবেদার সরকারের গদিরক্ষা চুক্তি।
৬. জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবিক অধিকার ও নাগরিক অধিকারকে পদদলিত করে।
৭. এ সরকারের সদস্যগণ হয় নিষ্ঠুর-অমানবিক ও লুটেরা।সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই-এর তাবেদার সরকার ও ইরাকের নূরী আল মালিকীর তাবেদার সরকারের সদস্যদের হাজার হাজার কোটি ডলারের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাই এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। ধ্বংসপ্রায় স্বদেশ পুনর্গঠনের অর্থ আত্মসাৎ করতে এদের বিবেকে বাধে না।


সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে দেশ উদ্ধারে ও স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষায় করণীয়ঃ
১. দেশপ্রেমিক দলসমূহের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা বিদেশী এজেন্টদেরকে চিহ্নিত করে বহিষ্কার করে দলকে পরিশুদ্ধ করা ও দলীয় কর্মী বাহিনীকে দলীয় আদর্শের অনুকূলে কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রদান।
২. দলমতের উর্ধ্বে উঠে সকল দলমত ও সেক্টরের সৎ, সাহসী, অভিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম গঠন।
৩. সাহসী, অভিজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের থিংক ট্যাংক গঠন। উক্ত থিংক ট্যাংক জাতিকে দিকনিদের্শনা দেবে ও বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামীদের সাথে সেতু বন্ধন স্থাপন করবে।
৪. রোগের উপসর্গের চিকিৎসায় সময়, শ্রম ও অর্থ বিনষ্ট না করে মূল রোগের চিকিৎসায় সর্বশক্তি নিয়োগ করা অর্থাৎ তাবেদার সরকার উৎখাত করাই হবে একমাত্র এজেন্ডা।
৫. গ্লোবাল রাজনৈতিক আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য আসন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশপ্রেমিকদেরকে সজাগ-সতর্ক করা ও প্রাক-প্রস্তুতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।
৬. বর্ণবাদী ও বস্তুবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিকট পদানত হলে কিরূপ ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে হবে তা অতীত ও বর্তমান ইতিহাসের আলোকে জাতিকে জানানো ও সজাগ করা।
<b>মনে রাখতে হবে, দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম থাকলে আমি থাকব, আমার বর্তমান পদ-পদবী, ব্যবসা-বাণিজ্য-ভূখ- অস্তিত্ব টিকে থাকবে ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। পক্ষান্তরে দেশ যদি সাম্রাজ্যবাদের হাতে পুরোপুরি চলে যায় তবে আমার পদ- পদবী, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভূখ-, বাড়ি-গাড়ি, বালাখানা, পোশাকপরি” ছদ কিছুই থাকবে না। এমনকি ইরাক-আফগানিস্তানের জনগণের ন্যায় আমাদের লাশ শৃগাল-কুকুরের খাদ্যে পরিণত হবে। আর গৃহযুদ্ধ হলো দুনিয়ার জীবনে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় খোদায়ী গজব।</b>


এস, এম, নজরুল ইসলাম।
০১৭১১৭২০৯২৩
সম্পাদকঃমাসিক ইতিহাস অন্বেষা।

No comments:

Post a Comment