সাম্রাজ্যবাদী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, মুসলিম বিদ্বেষী রক্তশোষক জগৎ শেঠ-উমিচাঁদ গং এবং ক্ষমতালোভী মীরজাফরের ত্রিমুখী ষড়যন্ত্রে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন স্বাধীনতার প্রতীক নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা সূর্য ১৯০ বছরের জন্য ডুবে গিয়েছিল। ঠিক তদ্রƒপ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির উত্তরসূরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চক্রান্তকারীদের গডফাদার যায়নবাদী ইসরাইল, জগৎ শেঠ-উমিচাঁদের উত্তরসূরি ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত এবং মীর জাফরের উত্তরসূরি মঈন-উ-আহমদ ও ইহুদীবাদ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুদ্দীনের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে ১/১১ নামক দ্বিতীয় পলাশী নাটক এ দেশে মঞ্চস্থ হয়। পলাশী বিপর্যয়ের পর প্রথমদিকে ষড়যন্ত্রের সহযোগী মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও জনগণ ষড়যন্ত্রের সুদূরপ্রসারী পরিণাম সম্পর্কে বেখবর ছিল। তারা এটিকে শুধুমাত্র নবাব সিরাজ থেকে নবাব মীর জাফরের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর হিসাবেই ধরে নিয়েছিল। ফলে মাত্র ৮০০ ইংরেজ সৈন্য ও ৩২০০ হিন্দু সৈন্য যখন মীর জাফরের সহযোগিতায় বন্দী সিরাজের লাশ মুর্শিদাবাদে প্রদর্শন করছিল তখনও জনগণ বিষয়টির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারেনি। পরবর্তী ৭ বছরের মধ্যেই জনগণ দেখল ইঙ্গ-হিন্দু ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের প্রকৃত শাসক, শোষক ও নির্যাতনকারী এবং সিংহাসনে যথারীতি একজন মুসলমান পুতুল নবাব অধিষ্ঠিত, যার কোনো ক্ষমতা নেই। পলাশী নাটকের পরই নবাব সিরাজের ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী ভেঙে বিধ্বস্ত করা হয়। পরবর্তী সাত বছরের মধ্যে ইঙ্গ-হিন্দু ষড়যন্ত্রকারীদের সহযোগী মুসলিমদের সেনাদল ভেঙে দেয়া হয় এবং তদস্থলে হিন্দু সেনাদল প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর বিভিন্ন আইন-বিধি জারি করে মুসলমানদের ব্যবসাবাণিজ্য
ও জমির অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। সর্বশেষ ১৮৩৫ সালে রাজ ভাষা পার্সীর পরিবর্তে ইংরেজি চালু করা হয় এবং সব সরকারি চাকরি থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করা হয়। ৭০০ বছরের শাসক মুসলমানরা উক্ত পলাশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অশিক্ষিত ভূমিহীন কৃষক, মজুর ও কুলিতে পরিণত হয়। প্রখ্যাত আওয়ামী বুদ্ধিজীবী আবুল মনসুর আহমদ ১৯৩০-এর দশকের মুসলমান সমাজের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে ‘জমিদার-হিন্দু, রায়ত- মুসলমান, শিক্ষক হিন্দু-ছাত্র মুসলমান, অফিসার হিন্দু- ঝাড়–দার মুসলমান, ডাক্তার হিন্দু-রোগী মুসলমান, উকিল হিন্দু- মক্কেল মুসলমান, খেলোয়াড় হিন্দু- দর্শক মুসলমান, শাসক ও শোষক হিন্দু- শাসিত ও শোষিত মুসলমান ইত্যাদি ইত্যাদি। ইঙ্গ-হিন্দু ষড়যন্ত্রকারীরা মীর জাফরের উত্তরসূরি মুসলমানদেরকেও লাভবান হতে দেয়নি।
দীর্ঘ ১০০ (১৭৫৭-১৮৫৭) বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ভারতের কোটি কোটি মুসলমান নিহত, আহত, পঙ্গু ও কারান্তরীণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হিন্দু শক্তির উত্থান ঠেকাতে ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী মুসলমানদেরকে আনুকূল্য প্রদান শুরু করে। এক পর্যায়ে দীর্ঘ ৪২ (১৯০৫-১৯৪৭) বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের পূর্বপুরুষগণ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভূখ- হাসিল করে। আমাদের অদূরদর্শিতায় ও হঠকারিতায় পাকিস্তান ভেঙে যায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।প্রতিকুল পরিস্থিতির কারণে আমরা সমগ্র ভারতের অধিকার ছেড়ে দিয়ে ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের বাংলাদেশে সুখের স্বর্গ নির্মাণ করা শুরু করি। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। আমাদের জাত-শত্রু ইঙ্গ-হিন্দু ষড়যন্ত্রকারীরা মীর জাফরের উত্তরসূরিদের সাথে মিলিত হয়ে এ ক্ষুদ্র ভূখ-টিতেও আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। মীর জাফরের উত্তরসূরিরা বিদেশী প্রভুদের ইশারায় বর্তমানে সিরাজের উত্তরসূরিদেরকে হামলা-মামলা-নির্যাতনের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রশাসন থেকে অভিজ্ঞ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিকদের বিতাড়িত, ওএসডি করা হয়েছে, সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে দেয়া হয়েছে, বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে প্রতিনিয়ত বিতর্কিত করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এ বাহিনীকে ধ্বংস করলে জনগণ নিশ্চুপ থাকে। (উল্লেখ্য, ১/১১-এর পর সেনাবাহিনী দ্বারা জনস্বার্থবিরোধী কাজ করানোর মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হয়। ফলে পিলখানা বিদ্রোহের সময় জনগণ সেনাবাহিনী রক্ষায় নির্লিপ্ত ছিল)। একইভাবে নিম্নমানের লোকদেরকে নমিনেশন দিয়ে এমপি নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত ও বিতর্কিত করা হয়। ’৭২-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিপথে পরিচালনাকারী এবং জনগণ কর্তৃক বারবার প্রত্যাখ্যাত বামপন্থী ঘরানার লোককে আইনমন্ত্রী করা হয় এবং হাইকোর্ট কর্তৃক দুর্নীতিবাজ হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিকে আইন প্রতিমন্ত্রী করে আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে চরমভাবে বিতর্কিত করা হয়। সর্বশেষ এলএলবি পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ নিম্নমানের চিহ্নিত দলীয় উকিল, হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত প্রধান আসামি ও প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাঙচুরকারী ব্যক্তিদেরকে বিচারপতি নিয়োগ করে আমাদের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট করা হয়। এরূপ নাজুক পরিস্থিতিতে যদি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আমাদের নতুন শাসক হিসেবে উড়ে এসে জুড়ে বসে এবং বিতর্কিত আইন-বিচার ও সংসদকে বিধ্বস্ত করে, বিতর্কিত বাহিনীসমূহ ভেঙে দেয় তবে জনগণের নির্লিপ্ত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এভাবেই একটি দেশের স্বাধীনতা স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্বের মৌলিক স্তম্ভসমূহকে বিতর্কিত ও দুর্বল করে আগ্রাসনকে নির্বিঘ্ন করে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কোনো দেশে প্রবেশ করার পূর্বেই তার তল্পীবাহক পুতুল সরকার কর্তৃক আগ্রাসন প্রতিরোধে সক্ষম ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশ এখন এরূপ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
১/১১-এর পর যেভাবে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করা হয়েছে
১/১১-এর পরিকল্পনাকারীরা ক্ষমতারোহণের পূর্বেই সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট শ্রেণীর কিছুসংখ্যক আইনজীবী দ্বারা সুপ্রিমকোর্টে ব্যাপক ত্রাসের সৃষ্টি করে এবং প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাঙচুর করে। এতে বিচারকগণ এমন ভীতসন্ত্রস্ত হয় যে, পরবর্তীতে তাঁরা বেআইনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইচ্ছানুযায়ী দেশপ্রেমিক সম্মানিত নাগরিকদের বিরুদ্ধে যাচ্ছেতাই রায় প্রদান করে। সময়ের বিবর্তনে তাদের উক্ত রায়সমূহ হাসি-তামাশার বিষয়ে পরিণত হয় এবং উক্ত কোর্টকে জনগণ ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ নামে আখ্যায়িত করে ও উক্ত বিচারকে ক্যামেরা ট্রায়াল নামে অভিহিত করে। ক্ষমতায় এসে বর্তমান ডিজিটাল সরকার উপরোক্ত বিচারকদের তিরষ্কার না করে পুরস্কৃত করে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ও সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নামক অপর একটি ক্যাঙারু কোর্ট গঠন করে দেশপ্রেমিক সম্মানিত নাগরিকদের হয়রানিতে লিপ্ত রয়েছে। অদ্য ৩০/১২/২০১০ তারিখ সকাল ১০টায় আমি প্রথমবারের মতো উক্ত ক্যাঙ্গারু কোর্টে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং যথারীতি বাধাগ্রস্ত হই। শুধু আমি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি তা নয়- দু-একজন সাংবাদিক ব্যতিত সকল সাংবাদিক গেটের বাইরে সারাক্ষণ অপেক্ষায় ছিল। সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর পক্ষের অনেক সিনিয়র আইনজীবীকেও গেটের ভিতর ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাঁর পরিবারের সদস্য যথাক্রমে তাঁর ভাই সাইফুদ্দীন কাদের চৌধুরী ও স্ত্রী, তাঁর বোন হাসিনা কাদের সিনহা অনেক তদ্বির করেও ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পায়নি। পক্ষান্তরে বর্তমান এটর্নি জেনারেল, ২ জন সহকারী এটর্নি জেনারেল এবং এটর্নি জেনারেল অফিসের সাথে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীগণ সদলবলে ট্রাইব্যুনালে হাজির থেকে বিচার কাজ প্রভাবিত করেছেন। অথচ আইনগতভাবে এটার্নি জেনারেল বিচার চলাকালে তথাকথিত ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করে অবস্থান করা ন্যায়সঙ্গত নয়। সংবিধান লংঘন করে নিজস্ব ঘরানার হাইকোর্টের বিচারপতিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ দেয়া, দলীয় আইনজীবীদেরকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া, দলীয় বিবেচনায় ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া, দলীয় লোককে বাদী করে দলীয় সাক্ষীদের থেকে সাক্ষী নিয়েও আটককৃতদের বিরুদ্ধে ফরমায়েশী চার্জশীট দিতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন সরকার সম্ভবত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এরই বহিঃপ্রকাশ ছিল তথাকথিত স্বাধীন ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে সদলবলে এটর্নি জেনারেলের অনাহুত উপস্থিতি ও হস্তক্ষেপ। ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের উদ্দেশে কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পুলিশ তাঁকে সে সুযোগ দেয়নি। উপরন্তু প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানানোর অধিকারটুকুও তাঁকে দেয়া হয়নি। তাঁর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের নিয়োগকৃত আইনজীবীদেরকে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। অথচ এটার্নি জেনারেলসহ মোট ৩৩ জন আইনজীবী/প্রসিকিউটর আমার স্বামীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।বর্তমান সরকারের আমলে বিচার বিভাগ বিতর্কিত হওয়ার প্রধান প্রধান কারণ সমূহ
মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে, দেশের পচন শুরু হয় নেতা থেকে। একইভাবে একটি পচা মাছ যদি শত শত মাছের মধ্যে থাকে তবে সব মাছেই দ্রুত পচন শুরু হয়। এ জন্য জেলেরা পচা মাছকে ভাল মাছ থেকে আলাদা করে রাখে। আমাদের অশিক্ষিত জেলেদের বুদ্ধিটুকুও বর্তমান সরকারের আছে বলে মনে হয় না। অথবা বর্তমান সরকার পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই আমাদের দেশের আইন ও বিচার বিভাগ ধ্বংসে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ আইন প্রতিমন্ত্রীকে নির্বাচিত করেছেন যাতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয় এবং দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করে। বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ শাসনামলে জজকোর্টে পিপি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পত্রত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন অপকর্ম প্রকাশিত হলে হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ আলী আজগর খান ও বিচারপতি এস কে সিনহা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সুয়োমুটো রুল জারি করেন। উক্ত রুলে হাইকোর্ট বলেছিল, “পত্রিকায় প্রকাশিত গুরুতর অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে রেকর্ডপত্র দেখার পর কোর্ট মনে করেন, এই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট মামলায় (ডিবি সোর্স জালাল হত্যা মামলা, ১. সেশন কেস নং ৩৭১২/১৯৯৯। ডেইলী স্টার বনাম রাষ্ট্র মামলা/ ৫৩ ডি.লে.আর-২০০১) পিপি হিসেবে নিহত পরিবারের হয়ে তার দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ও মনোযোগী নন। সুতরাং তার এ পদে থাকলে সংশ্লিষ্টরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। সংশ্লিষ্টদের ন্যায বিচার নিশ্চিত করার জন্য কামরুলকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দায়িত্বশীল কাউকে কেন নিয়োগ করা হবে না মর্মে রুল ইস্যু করা হয়। ২০০১ সালের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে এ রুল এবসলিউট করে সাতদিনের মধ্যে অন্য পিপি নিয়োগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। উপরোক্ত রায় মতে, দেখা
যায়- ১। এডভোকেট কামরুল দায়িত্বশীল ব্যক্তি নন, ২। তিনি ন্যায়বিচারের পক্ষে বাধাস্বরূপ।
উপরোক্ত ঘটনার আলোকে কয়েকটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে।
১। বর্তমান সরকার কি জনগণকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার জন্য আইন প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এডভোকেট কামরুলকে নিয়োগ দিয়েছেন?
২। যে দুজন বিচারপতি এডভোকট কামরুলকে ন্যায় বিচারের পক্ষে বাধাস্বরূপ বলে চিহ্নিত করেছিলেন তাঁরা কেন বর্তমানে সুয়োমোটো রুল জারি করে বলছেন না যে, “যে ব্যক্তি পিপি হিসেবে ন্যায়বিচারের পক্ষে বাধা ছিলেন তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী থাকলে জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে এবং বিচার বিভাগ বিতর্কিত হবে।
বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ক্ষেত্রে আইন প্রতিমন্ত্রীর বর্তমান ভূমিকা
প্রবন্ধের কলেবরে বিস্তারিত লেখা সম্ভব নয় বিধায় এক্ষেত্রে আমি তাঁর একটি কর্ম যা আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জন্য দায়ী, তার উল্লে করব এবং বিচারকাজে হস্তক্ষেপকারী ২টি বক্তব্য উল্লেখ করছি।
১। বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রীকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রধান নিযুক্ত করা হয়েছে। এ পদে থেকে তিনি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যত হত্যা/ ছিনতাই/ রাহাজানি/ চাঁদাবাজি/ ডাকাতি/ নারী নির্যাতন মামলা ছিল সেগুলোকে রাজনৈতিক হয়রানি আখ্যায়িত করে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন। ফলে ইতোমধ্যে ৬৬৫৫টি মামলার হাজার হাজার চিহ্নিত খুনি, ডাকাত, চাঁদাবাজ, নারী নির্যাতনকারী জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ খোদ রাজধানীসহ সারা দেশে ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, ছাত্রী বাণিজ্য, ইভ টিজিং বা যৌন হয়রানি, রাজনৈতিক হত্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সংক্রান্ত ২টি তথ্য হলো-
(ক) গত ৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬৫ জন নিহত ও ১১৩০২ জন আহত হয়েছে। (সংগ্রাম, ২৯/১২/১০)
(খ) ইভ টিজিং বা যৌন হয়রানির কারণে এ বছর ৩১ জন মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং এ কাজে বাধা দেয়ায় ১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে যাদের মধ্যে মা, শ্বশুর, ভাই ও শিক্ষক রয়েছেন। (সূত্র : ২৮/১২/১০-এর এনটিভি নিউজ)
২। (ক) চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হবে। (নয়া দিগন্ত, ৪/১২/২০১০)
(খ) সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে। (দিগন্ত টিভি, ১৭/১২/২-১০) উপরোক্ত ১ম উক্তিতে দর্শকরা বুঝে নেবেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নয়- আইন প্রতিমন্ত্রীই স্বাধীন নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন। দ্বিতীয় উক্তিটির ব্যাপারে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তা হলো, ১৫/১২/২০১০ তারিখে সরকার সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের জন্য ট্রাইব্যুনালের নিকট আবেদন করে। ট্রাইব্যুনাল ১৯/১২/২০১০ইং তারিখ আবেদনের উপর শুনানির দিন ধার্য করে। ১৫/১২/২০১০ইং তারিখ দিবাগত রাতে সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে চরম নির্যাতনের পর রিমান্ডে নেয়া হয়। ১৭/১২/২০১০ইং তারিখে আইন প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদেরকে জানান, “১৯/১২/২০১০ তারিখে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে।’ এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো ১৯ তারিখ শুনানির পর স্বাধীন ট্রাইব্যুনাল কি নির্দেশ দেবে আইন প্রতিমন্ত্রী তা আগাম জানলেন কিভাবে? তবে কি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত মামলা ও মামলার রায় আইন প্রতিমন্ত্রী পূর্বেই ট্রাইব্যুনালকে লিখে দিয়েছেন?
বর্তমান সরকারের আমলে বিচার বিভাগ বিতর্কিত হলো কেন?
বিচার বিভাগ বিতর্কিত হওয়ার প্রধান কারণ বর্তমান সরকারের অনুসৃত নীতি দলীয়করণ, আত্মীয়করণ ও গোপালগঞ্জীকরণ। দ্বিতীয় কারণ বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রী, তৃতীয় কারণ কিছু সংখ্যক লোভী, মেরুদণ্ড-হীন বিচারপতি। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো-
১.
খুনের মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামিকে বিচারপতি নিয়োগ।
২.
প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাঙচুরকারীকে বিচারপতি নিয়োগ।
৩.
প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাঙচুরকারীদের বেকসুল খালাস প্রদান কিন্তু সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ও অলিউল্লাহ নোমানকে সত্য সংবাদ পরিবেশন করায় জেল জরিমানা ও আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা।
৪.
পঞ্চম সংশোধনী ও ৭ম সংশোধনী বিষয়ক এখতিয়ার বহির্ভূত রায় প্রদান।
৫.
এলএলবিতে তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত এবং চিহ্নিত দলীয় আইনজীবীদের বিচারক নিয়োগ।
৬.
এটর্নি জেনারেল কর্তৃক বারবার পেশীশক্তি প্রদর্শন ও বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে নজিরবিহীন অশালীন বিদায় সংবর্ধনা প্রদান।
৭.
জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ প্রদান।
৮.
সংবিধান লংঘন করে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও পরিচালনা।
৯.
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল কি রায় দেবেন তা সরকারের মন্ত্রীদের আগাম ঘোষণা দেয়া।
১০.
আদালত অবমাননার দায়ে সাবেক সচিব, ডিসি ও ওসিকে আদালতে তলব করে আদালক কর্তৃক অবমাননাকর আচরণ করা।
১১.
সরকারদলীয় শোক দিবসকে আদালত কর্তৃক জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে আদালতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া।
১২.
মামলার শুনানিতে আপত্তি করায় বিচারপতি কর্তৃক আইনজীবীদের গ্রেফতারের হুমকি প্রদান।
১৩.
আগাম জামিনের ব্যাপারে হাইকোর্টের কঠোরতা।
১৪.
হাইকোর্ট কর্তৃক জামিনপ্রাপ্ত বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তি আটকে দেয়ার জন্য এটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে কারাগারে ফোন করা।
১৫.
বিদেশী নাগরিককে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া।
১৬.
বিনা শুনানিতে বেগম জিয়ার লীভ টু আপীল খারিজ করা।
১৭.
মাহমুদুর রহমান ও অলিউল্লাহ নোমানের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগ না দেয়া।
১৮.
রিমান্ডের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া গাইড লাইন নিম্ন আদালত ও পুলিশ কর্তৃক অমান্য করা।
১৯.
বিরোধী নেতাকর্মীদের ঢালাওভাবে রিমান্ড প্রদান এবং শ্যোন এরেস্ট দেখানো।
২০.মিথ্যা মামলা জেনেও আদালত কর্তৃক শ্যোন এরেস্ট দেখানো।
২১.
উচ্চ ও নিম্ন আদালতে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ।
বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে বিচার ব্যবস্থা
১.
কোনো কোনো বিচারক ও তাদের কর্মচারীরা দুর্নীতিগ্রস্ত। ...টিআইবি’র রিপোর্ট অতিরঞ্জিত নয়। -দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, যুগান্তর, ২৮/১২/১০
২.
বিডিআর জওয়ানরা ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ব্যাপারে শংকিত। (জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, আমার দেশ ২৯/১২/১০)
৩.
দেশে আইনের শাসন নেই। চলছে অঘোষিত ফ্যাসিবাদ। বর্তমানে কাউকে ধরলেই রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। (সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে টিআইবি চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দীন খান। যুগান্তর-২৮/১২/১০
৪.
প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। (সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ) সূত্র-ঐ
৫.
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের বক্তব্যে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত করা।
৬.
সুজন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, দেশের প্রধান তিনটি অঙ্গের মধ্যে নির্বাহী বিভাগ তথা প্রশাসন ও সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিচার বিভাগের উপর মানুষের আস্থা নেই। সরকারের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কেউ আইনের তোয়াক্কা করছেন না। গণতান্ত্রিক শাসনের নামে স্বৈরতন্ত্র চলছে।... মামলা দিয়ে যাকে তাকে রিমান্ডে নিয়ে বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সরকার আইনেরশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নাগরিকদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে ও প্রতিবাদীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। (সূত্র-ঐ)
৭.
বক্তারা আরো বলেন-
(ক) আইনের শাসনের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা।
(খ) সরকারের লোকজনই নগ্নভাবে আইনের শাসন ধ্বংস করছে। সংগ্রাম-২৮/১২/১০
(গ) আইনের শাসনের দুর্বলতার কারণে কেউ কোথাও বিচার পাচ্ছেন না। (সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর) আঃ সময়-২৮/১২/১০।
৮.
বিতর্কিত ব্যক্তিরা আদালতের শীর্ষ পর্যায়ে থাকায় মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। (এনার্জি সলিউশন অব বাংলাদেশের গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা, নয়া দিগন্ত- ০৪/১২/২০১০।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী নাকি রাজনৈতিক অপরাধী
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিঘোষিত লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে। যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার করা। অথচ সরকার এ পর্যন্ত যাদেরকে এই অভিযোগে অভিযুক্ত হিসেবে আটক রেখেছে তাদের কাউকে সরাসরি উক্ত অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা হয়নি। এখানেই নিহিত রয়েছে মূল রহস্য। এ পর্যন্ত যে ছয়জনকে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাঁরা হলেন জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহ-সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং বিএনপির ষ্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ সকল নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হচ্ছিল। অবশেষে ২৯/০৬/১০ ইং তারিখে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার’ কথিত সাজানো মামলায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়। ইসলাম ধর্মের অস্তিত্বে আঘাতকারী ধর্মনিরপেক্ষ সরকার হঠাৎ করে ধর্মের পক্ষে এসে ইসলামী আন্দোলনরত শীর্ষ নেতৃত্বকে গ্রেফতার করে দেশবাসীকে ডিজিটাল চমক দেখিয়েছে বটে। ইসলাম বিদ্বেষী ইহুদী-খ্রিস্টান শক্তির প্রেসক্রিপশন নিয়ে যারা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের দ্বারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মামলা যেন ভূতের মুখে রাম নাম। জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের গেট থেকে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতারের পর জানানো হয় তারা ২০০৮ সালের পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলার আসামি। এর আগে তাঁরা কেউ এ মামলা সম্পর্কে জানতেন না। জানলে জামিন নিতেন। উক্ত পাঁচজনকে আটকের পরই শুরু হয় নিত্যনতুন সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের ও রিমান্ডের নামে নির্যাতন। উক্ত নিত্য নতুন মামলার মধ্যে কয়েকটি হলো ১। ২৭ জুন রমনা থানায় দায়ের করা গাড়ি ভাঙচুরের মামলা। ২। ১৭ ফেব্রুয়ারি পল্টন থানায় দায়ের করা পুলিশের কাজে বাধাদান মামলা। কদমতলী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলা, উত্তরা থানার বই বিতরণপূর্বক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্টের মামলা, রমনা থানার হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলা ও উত্তরা থানায় দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রভৃতি। উক্ত মামলাসমূহের মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর মামলা, পুলিশের কাজে বাধাদান মামলা ও বই বিতরণ মামলাসমূহ হলো সবচেয়ে হাস্যকর ও উদ্ভট মামলা। কেননা এ দেশের কেউ কখনও বিশ্বাস করবে না যে, নিজামী সাঈদীর মত লোক গাড়ি ভাঙচুর করতে পারে, আর পুলিশের কাজে বাধাদান মামলাটি আরও হাস্যকর। কেননা সরকারি দলের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত পুলিশকে পেটাচ্ছে, থানায় হামলা করছে, অথচ পুলিশের কাজে বাধাদান মামলা করা হচ্ছে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে। বই বিতরণ মামলার ব্যাপারে জিজ্ঞাস্য হলো তারা কোনো নিষিদ্ধ বই বিতরণের সাথে জড়িত কিনা। জড়িত থাকলে উক্ত বইয়ের নাম কি জনগণ তা জানতে চায়। কেননা তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে পরিকল্পিত, সাজানো ও হাস্যকর মামলায় অথচ বলা হচ্ছে তারা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। অর্থাৎ তারা ১৯৭১ সালে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটে জড়িত ছিল। এ বিষয়ে জনগণের জিজ্ঞাসা হলো-
১.
তাঁরা ১৯৭২ সালে দালাল আইনে আটক হয়েছিল কিনা? তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭২-৭৫ সালে দালাল আইনে বা হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের অভিযোগে কোনো মামলা হয়েছিল কিনা?
২.
১৯৭১ সালে তাদের কার বয়স কত ছিল? উক্ত রূপ অপরাধ করার বয়স তাদের হয়েছিল কিনা? অথবা ১৯৭২-২০১০ সময়কালে তারা কোনো লুটপাট ও ধর্ষণের কাজে জড়িত ছিল কিনা/ নাকি তারা ১৯৭১ সালে হঠাৎ ভায়াগ্রা/ইয়াবা সেবন করে ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছিল এবং যুদ্ধের পর উক্ত বদঅভ্যাস ত্যাগ করেছে?
৩.
লুটপাটের মাধ্যমে তারা ১৯৭১ সালে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছিল কিনা? নাকি যারা তাদের লুটপাটের বিচার করতে চাইছে তারা ১৯৭২-৭৫ সালে এবং বর্তমানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে?
সরকার যদি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তরিক হতো তাহলে প্রথমে তালিকাভুক্ত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদেরকে যারা ছেড়ে দিয়েছে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতো এবং তৎপর ১৯৭২-৭৩ সালে যারা দালাল আইনে ও অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছিল তাদেরকে ধরে এনে পুনরায় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাত। অথচ সরকার উক্ত দালাল ও অপরাধীদের ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার লক্ষ্যে উদোরপিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে এবং এর অংশ হিসেবে জামায়াতের ৫ জন শীর্ষ নেতা ও বিএনপির শক্তিশালী ও প্রতিভাবান নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর উপর হামলে পড়েছে। সত্যি কথা হলো, সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার লোভে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধে সক্ষম জাতীয় নেতাদেরকে হয়রানি ও নির্যাতন করে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত রয়েছে। সরকার যদি মনে করেন দেশবাসী এসবের কিছুই বুঝে না তবে সরকারকেই এর মাশুল দিতে হবে।
নবাব সিরাজের সার্থক উত্তরসূরি সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী
যায়নবাদী ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের দলিল চৎড়ঃড়পড়ষ ড়ভ ঃযব বষফবৎং ড়ভ ঃযব তরড়হ বইতে রয়েছে, আন্তঃকোন্দলে লিপ্ত একটি জাতি বা বিশাল সেনাবাহিনী অপেক্ষা সৎ প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ঠেকাতে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের টার্গেটকৃত দেশের প্রতিভাবান, সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রথম আঘাতেই নির্মূল করতে উদ্যোগী হয়। এরই অংশ হিসেবে ১৭৫৭ সালে প্রথম সুযোগেই নবাব সিরাজকে হত্যা করা হয়। উন্নত প্রযুক্তি ও মিডিয়া না থাকলে সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে ও প্রথম আঘাতেই হত্যা করা হতো। নবাব সিরাজ যেভাবে ঘরে বাইরে শত্রু পরিবেষ্টিত থেকেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমৃত্যু লড়াই করেছেন সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীও তদ্রুপ ঘরে বাইরে শত্রু পরিবেষ্টিত অবস্থায় থেকে ও দেশের আজাদী ও মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে আমৃত্যু লড়াই করতে সংকল্পবদ্ধ। নবাব সিরাজের সুবিধা ছিল- তিনি ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী। ফলে তিনি নিজ সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নে সক্ষম হতেন। অপরদিকে সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী প্রধান নির্বাহী বা দলীয় প্রধান নন। ফলে তাঁর সুচিন্তিত সংকল্প বাস্তবায়নে তিনি সব সময় সক্ষম ছিলেন না। ফলে তাঁর প্রবল বিরোধীতাকে উপেক্ষা করে মীর জাফরের উত্তরসূরি মঈন-উ-আহমদকে প্রধান সেনাপতি করা হয়েছিল এবং দেশ বর্তমান দুরবস্থায় পতিত হয়। সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী কেবলমাত্র একজন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী নন। তিনি নিজে একাই একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর পরই জনমনে তাঁর স্থান। জরুরি সরকারের আমলে সকল নেতানেত্রী যখন গর্তে লুকিয়েছিল, সবার কণ্ঠ যখন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তখনও তাঁর হুংকারে জাতি জেগে উঠতো ও সম্বিত ফিরে পেত। বন্দী হওয়ার পর জরুরি সরকারের দায়ের করা মামলাসমূহ তিনি নিজেই আদালতে মোকাবেলা করে সকল মামলায় বেকসুর খালাস পেয়ে মুক্তি লাভ করেছেন এবং আদালতে ও আদালতে আনা-নেয়ার ফাঁকে যখনই সুযোগ পেতেন তখনই সিংহ নিনাদে জাতিকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন। বর্তমান ডিজিটাল সরকারের আমলেও তাঁর ভূমিকা অপরিবর্তিত ছিল এবং থাকবে। তাঁর এই অকুতোভয় উচ্চারণ ও যুক্তিপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েই বর্তমান ডিজিটাল সরকার ২৬ জুনের তথাকথিত গাড়ি পোড়ানো ও হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে নতুন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অথচ ২৬ জুন তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন। ঠিক একইভাবে ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্র হিসেবে বিদেশে ছিলেন। তিনি দালাল আইনে আটক হননি। তাঁর বিরুদ্ধে উক্ত সময়ে কোনো মামলা হুলিয়া বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়নি। তাঁর পিতার মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে তিনি ব্যারিস্টারী পড়া অসমাপ্ত রেখে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসেন। অথচ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আমলে তাঁকে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় গ্রেফতার করে পৈচাশিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
বর্তমান অবস্থায় আমাদের করণীয়
প্রিয় দেশবাসী, শুধুমাত্র ক্ষমতা ও অর্থের লোভে দেশের একটি জনগোষ্ঠী আগ্রাসী শক্তির দোসর হয়েছে। অথচ আগ্রাসী শক্তিকে প্রতিহত করা সম্ভব না হলে আমাদের অবস্থা ইরাক আফগানিস্তানের ন্যায় হবে। জনগণ এতদিন মনে করতো ৪ দলীয় জোট হয়তো সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু গত ৪ বছরের ঘটনা-পরম্পরায় জনগণ দেখতে পাচ্ছে, লক্ষ্যহীন, জিয়ার আদর্শহীন, প্রশিক্ষণহীন ও বিশৃঙ্খল বিএনপি এবং পরাশ্রয়ী চড়ুইয়ের মানসিকতা সম্পন্ন জামায়াত নেতৃত্ব জাতিকে নেতৃত্ব দিতে অক্ষম। অথচ উক্ত দুই দলে ও অন্যান্য ছোট দলে অনেক যোগ্য নেতাকর্মী রয়েছে যারা দূরদর্শী, গতিশীল ও সাহসী নেতৃত্ব পেলে জনগণকে সংগঠিত করে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। আমাদের এখন এমন একজন নেতৃত্ব প্রয়োজন যিনি শ্রীলঙ্কার মাহেন্দ্র রাজাপাকসের মতো সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত প্রতিহত করে সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টদেরকে নির্মূল করবেন। আমাদের এমন একজন নেতার প্রয়োজন যিনি প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে নেপালের বীর যোদ্ধা পুষ্পকমল দাহাল প্রচন্ডের মতো বলতে পারবেন, ‘সামন্তবাদী শক্তি ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ আমাদের চিরশত্রু। এখন ভারতের বিরুদ্ধে জাতীয় যুদ্ধ ও জনযুদ্ধের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’ বর্তমান অবস্থায় সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মধ্যেই আমি রাজাপাকসে ও প্রচন্ডের মতো গুণাবলী ও সাহসিকতা প্রত্যক্ষ করছি। সুধী পাঠক, আমি স্বাধীন দেশে জন্মেছিলাম। স্বাধীনভাবেই জীবনের এতটি বছর কাটিয়েছি। ফলে প্রবন্ধটি আমার ব্যক্তিগত স্বাধীন মতামত। এমতাবস্থায় কেউ মনোক্ষুণ্ণ হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার সংকল্প,স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশে অক্ষম হলে আর লিখব না।
No comments:
Post a Comment