Monday, January 9, 2012

২৩ জুন মুভমেন্ট কি পুনরায় দেশ-জাতি-ধর্ম বিপন্ন করবে ?(প্রথম প্রকাশ মাসিক ইতিহাস অন্বেষা,মে ২০১১ সংখ্যা)


২৩ জুন ১৭৫৭ সাল, প্রহসনের যুদ্ধে নবাব সিরাজের পতন ও মীরজাফর, জগৎ শেঠ ও ক্লাইভের উত্থানের দিন। আমাদের স্বাধীনতা সাবর্ভৌমত্ব, সমৃদ্ধি, অস্তিত্ব-মর্যাদা-ধর্ম বিপন্নের দিন, মুসলিম বিদ্বেষী ক্লাইভ, জগৎ শেঠ, রাজবল্লভ, রায় দুর্লভ ও ক্ষমতালোভী মীরজাফরের খুশির দিন। সাম্রাজ্যবাদী ও বর্ণবাদীদের উত্থানের সূচনা, দেশপ্রেমিক ও দ্বীন ধর্মের অনুসারীদের পতনের সূচনা। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন মুভমেন্টের উপাদান ছিল লুটেরা ইংরেজ, মুসলিম বিদ্বেষী বর্ণবাদী বর্ণ হিন্দু ও চরিত্রহীন ক্ষমতালোভী মুসলিম নামধারী সেনাপতি মীরজাফর গং। একইভাবে ২০০৭ সালের পলাশী সদৃশ্য ১/১১-এর উপাদানের প্রকৃতিও হুবহু একইরূপ। উভয় ঘটনাতেই ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন মুসলিম শক্তি বিপন্ন হয়েছে, মুসলিম জাতি আমীর থেকে ফকিরে পরিণত হওয়ার করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে গেছে। রক্তাক্ত নৃশংসতায় মুসলিম নেতৃত্বকে ধ্বংস করা হয়েছে এবং মুসলমানেরা নেতৃত্বশূন্য হয়েছে। বর্তমানেও বলিষ্ঠ মুসলিম নেতৃবৃন্দকে অনুরূপ নৃশংসতায় ধ্বংসের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও আরেকটি ২৩ জুন মুভমেন্ট মাত্র। ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন দেশপ্রেমিক মুসলমানরা যে শোকাবহ দিনটিকে পলাশী বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করে সেই ২৩শে জুনেই জন্ম হয়েছে আওয়ামী লীগ নামক দলটি। এ দলটি জন্মলগ্ন থেকেই মুসলমানদের উক্ত বিপর্যয়ের দিনটিতে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে পরম তৃপ্তি লাভ করে।

১/১১ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই বর্তমান ২৩ জুন মুভমেন্ট ক্ষমতাসীন হয়। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন মুভমেন্ট যেভাবে আমাদের দীর্ঘ ৫৫০ বছরের অর্জনকে ধূলিস্যাৎ করেছিল তদ্রুপ বর্তমান ২৩ জুন মুভমেন্ট আমাদের বিগত ৬০ বছরের অর্জনকে ধূলিস্যাৎ করার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মাত্র কয়েকটি বছরেই আমাদের সার্বভৌমত্ব অপসৃত, স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ, সেনাবাহিনী পঙ্গু, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিধ্বস্ত, সীমান্ত অরক্ষিত, সংবিধান আইসিইউতে, প্রশাসন মেধাশূন্য ও অকার্যকর, বিচার বিভাগ বিতর্কিত, অর্থনীতি বিপন্ন, রাজনীতি যাদুঘরে, দেশপ্রেমিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত এবং সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের সবচেয়ে কার্যকর ও কর্মক্ষম ছাত্র ও যুবশক্তি ফেনসিডিল, ভায়াগ্রা, ইয়াবায় আসক্ত হয়ে মা-বোনদের উপর হামলে পড়ছে, দেশ গঠনের পরিবর্তে দেশ ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশীয় সংস্কৃতি লালনের পরিবর্তে বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আইনের রক্ষকগণ ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের অস্তিত্ব ও স্থিতিশীলতা চরম বিপর্যয়ের মুখে অবস্থান করছে। বর্তমান সরকারের সাম্রাজ্যবাদ তোষণ নীতি, সরকারি দলের আজীবন ক্ষমতায় থাকার মানসিকতাপ্রসূত অদূরদর্শী কার্যকলাপ, দলীয় লোকদের সীমাহীন লোভ-লালসা, নীতিহীনতা,প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও স্বধর্ম বিদ্বেষ দেশের বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থার জন্য বহুলাংশে দায়ী।

সরকারের ইসলাম বিদ্বেষের সম্ভাব্য কারণ
বর্তমান মহাজোট সরকার নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হিসেবে প্রচার করে কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য ঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সাথে এ সরকারের কার্যক্রমের কোনো মিল নেই, একটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া। পাঠকবৃন্দ নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে ঘোষিত ইউরোপ, আমেরিকায় নির্বাচিত সরকার শপথ নেয় বাইবেল স্পর্শ করে। উক্ত সরকারসমূহ নিজেদের ধর্ম নেতাদেরকে যথাযথ সম্মান করে, বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারে ও প্রসারে নিয়োজিত ধর্ম নেতাদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করে, তাদের নিরাপত্তা প্রদানে যুদ্ধর ঝুঁকি নিতেও কুণ্ঠবোধ করে না। ধর্মীয় সভা-সমাবেশ-মাহফিল অনুষ্ঠানে উক্ত সরকারসমূহ সার্বিক সহায়তা প্রদান করে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার মিথ্যা অজুহাতে ধর্মীয় নেতাদেরকে হয়রানি করে, অপবাদ দেয়, মিথ্যা মামলায় আটক করে, নির্যাতন করে, ইসলামের প্রচার-প্রসারে বাধা প্রদান করে, ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় সমাবেশে সরকারি প্রশাসন যন্ত্র ১৪৪ ধারা জারি করে, সরকারি দলের লোকেরা হামলা করে মাহফিল পণ্ড করে দেয়। প্রতিবেশী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেখানে হিন্দু ধর্মের নেতারা সমাজে ও রাষ্ট্রে সমাদৃত, সেখানে ধর্মীয় সভায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় না, হামলা করে পণ্ড করে দেয়া হয় না। সেসব দেশে সংখ্যাগুরুদের ধর্মীয় মতামত, কৃষ্টি-কালচার জাতীয়ভাবে প্রচার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

ইউরোপ-আমেরিকা ও ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মিল রয়েছে শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে। আর তা হলো, উক্ত সরকারসমূহ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হলেও তারা সর্বান্তকরণে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। মুসলমানদেরকে দমনে এবং ইসলামের অগ্রযাত্রায় বাধা দিতে তারা বিভিন্ন প্রকারের কালাকানুন রচনা ও প্রয়োগ করে প্রতিনিয়ত। মুসলমানদের মসজিদ-মাদ্রাসায় গোয়েন্দাগিরি করে, মিথ্যা অজুহাতে মুসলিম যুবকদেরকে বন্দী ও নির্যাতন করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, খ্রিস্টান ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সরকার ধর্মের কারণে খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতন করে না, হিন্দু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ধর্মের কারণে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করে না কিন্তু মুসলিম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ধর্মের কারণে স্বধর্মী মুসলমানদের উপর নির্যাতন করে। এই বৈপরীত্যের কারণ হতে পারে নিম্নরূপ:
১. মুসলিম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা শুধুমাত্র ক্ষমতায় যওয়ার জন্য ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আপন ভাইয়ের গোশ্ত ভক্ষণ করতে দ্বিধা করে না।
২. মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদী-খ্রিস্টান ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের খুশি করে ক্ষমতায় যাবার জন্য মুসলমান নামধারী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা স্বধর্মীয়দের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে।
৩. মুসলিম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা আত্মমর্যাদা সম্পর্কে উদাসীন। বৈষয়িক লোভে তারা যে কোনো অপকর্ম করতে কুণ্ঠিত হয় না।
৪. বাংলাদেশের বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের অনেকে চরম মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদী-খ্রিস্টান ও হিন্দুদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। বাস্তবতা হলো- তাদের কারো দাদা-নানা বিধর্মী ছিল, ফলে মুসলমানদের উপর অত্যাচার করে তারা পূর্ব পুরুষের হৃদয়কে শীতল করার কাজ করছে, তাদের কারো ছেলে ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ, কারো স্ত্রী বিধর্মী, কারো কন্যা জামাতা বিধর্মী। ফলে তারা নিজ দেশ ও ধর্মের লোকদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বিধর্মী আত্মীয়-স্বজনের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বর্তমান বাংলাদেশের মসজিদ মাদ্রাসায় পুলিশ-গোয়েন্দাদের সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা থাকলেও মন্দির-গীর্জা, সিনাগগে পুলিশের টিকিটি দেখা যায় না। স্পর্শকাতর সরকারি পদ থেকে রহিমকে বিদায় দিয়ে রামকে স্থাপন করা হয়েছে।

মহাজোট সরকারের ধর্মবিরোধী কার্যকলাপ
১. বোরকা বা পর্দা প্রাবিরোধী কার্যক্রম:
২০০৭ সালে অর্থাৎ মহাজোট সরকারের আন্দোলনের ফসল মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আমলে প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যাগাজিনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন-বাংলাদেশে জোট আমলে বোরকা পরিহিতা মহিলার সংখ্যা ৪০০ গুণ বেড়ে গেছে।২০০৯ সালে এ সরকার ক্ষমতায় এসেই জয়ের পৈত্রিক জেলা রংপুর থেকে পুলিশের সাহায্যে বোরকাবিরোধী কার্যক্রম শুরু করে।

ক. ১ মার্চ ২০১০ তারিখে রংপুর পুলিশ প্রশাসন বোরকা না পরার অপরাধে ২৯ জন মহিলাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালত এই মর্মে রায় দেয় যে, “কোনো মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না।এইভাবে আওয়ামী পুলিশ ও আওয়ামী আদালতের যোগসাজশে ইসলামের একটি ফরজ-এর বিরুদ্ধে সাজানো রায় দেয়া হলো এবং দেশব্যাপী বহু বোরকা পরিহিতাকে গ্রেফতার করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হলো। অথচ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট বিধান হলো- হে নবী তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও বিশ্বাসী নারীদের বলে দাও, তারা যেন চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের উপর টেনে দেয়। এতে তদের (ভদ্র ও মার্জিত) হিসাবে চেনা সহজ হবে, কেউ তাদের উত্ত্যক্ত (ইভটিজিং) করবে না।” (সূরা আহজাব, আয়াত ৫৯)। আল্লাহ আরো বলেন, “যারা বিশ্বাসীদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা নূর, আয়াত ২৪)
এইভাবে আওয়ামী লীগ জোট, তাদের প্রশাসন ও আদালত আল্লাহর কোরআনের বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইহকাল ও পরকালের শাস্তিকে নিজেদের জন্য অবধারিত করে নিয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ যেখানে পর্দার বিধান জারি করেছেন, সেখানে এ বিধানকে ঐচ্ছিক করার রায় প্রদান কি আল্লাহ-দ্রোহীতা নয়?

২. ফাতওয়া প্রদান নিষিদ্ধ করা : এ সরকার আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে মুফতিদের ফাতওয়া প্রদান নিষিদ্ধ করেছে। অথচ মানব জীবনের কোনো না কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান তুলে ধরার নাম হলো ফাতওয়া। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ.)ও ফাতওয়া দিয়েছেন। যথা-
ক. লোকেরা আপনার কাছে নারীদের প্রসঙ্গে ফাতওয়া চায়। আপনি বলুন, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদের ফাতওয়া দিচ্ছেন এবং সে বিষয়েও যা কিতাবে তোমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। (সূরা নিসা, আয়াত ১২৭)
খ. লোকেরা আপনার (রাসুল স.) নিকট ফাতওয়া জানতে চায়, আপনি বলুন, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদেরকে ফাতওয়া দিচ্ছেন।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৭৬)
ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো আইন না করার ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) ও ওয়ারাছাতুল আম্বিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।
৩. মহাজোট সরকারের ইসলামবিরোধী নারী নীতি যায়নবাদী ইহুদীদের পরিচালিত জাতিসংঘ ১৯৭৯ সালে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) গ্রহণ করে। মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে উক্ত সনদের ২, , , ১৩ ও ১৬ ধারার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি উত্থাপন করা হয়। বর্তমান মহাজোট সরকার নিজেদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে উক্ত ইসলামবিরোধী নারী নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করেছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১এর কয়েকটি ধারা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করা হলো:
ধারা ১৭.২ : নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (CEDAW)-এর প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ধারা ২৫.২ : উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা।
ধারা ১৮.৪ : কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ দূরীকরণ এবং পরিবারসহ সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা।
ধারা ২৩.৫ : সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া।
ধারা ৩৫.২ : একক নারী, নারী প্রধান পরিবার, শ্রমজীবী ও পেশাজীবী নারী, শিক্ষানবীশ ও প্রশিক্ষণার্থী নারীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ গৃহ ও আবাসন সুবিধা প্রদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা।

৪৯টি ধারা ও অসংখ্য উপধারায় বিভক্ত এই নারী নীতি মুসলিম বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে, দেশের হাক্কানী আলেম সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা এ নীতিকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়েছে। এরপরও বর্তমান সরকার তার ইসলামবিরোধী নীতির অংশ হিসেবে নারী নীতিকে জাতির উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার ইসলামের পারিবারিক আইন ও উত্তরাধিকার আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ আইন বাস্তবায়িত হলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এবং আমাদের শান্তিময় পরিবার প্রথা ভেঙ্গে যাবে। নারীরা পাশ্চাত্যের উলঙ্গ নারীদের মতো পরিবারবিহীন জীবন যাপনে বাধ্য হবে। মহান আল্লাহ যে আইন দিয়েছেন তাকে পরিবর্তনের অধিকার বর্তমান সরকারকে কে দিয়েছে? মহাজোট সরকার ঘোষিত নারী নীতিমালায় নারী-পুরুষকে সকল ক্ষেত্রে সমতা দেয়ার লক্ষ্য ঘোষিত হয়েছে, যা কোরআন ও সুন্নাহর বিরোধী। যথা-
১. ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (উত্তরাধিকার প্রাপ্তির) ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, “পুত্র সন্তান পাবে দুই কন্যা সন্তানের সমান, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা, আয়াত ১১)
২. রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, পুরুষ আপন পরিবার-পরিজেনর উপর দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে আপন অধীনস্থদের ব্যাপারে, নারী দায়িত্বশীল তার স্বামীর সংসারের। সে জিজ্ঞাসিত হবে আপন দায়িত্বাধীন বিষয়ে। (বুখারী ২য় খ-, পৃ. ১০৫৭। মুসলিম ২য় খ-, পৃ ১২২) (হাদিসটি সংক্ষেপিত)।

ধর্মহীন শিক্ষানীতি
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এ সরকার ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে ধর্মবিবর্জিত শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। ধর্মকে ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জানা গেছে, মুসলিম বিদ্বেষী বৃটেন-আমেরিকার প্রেসক্রিপশন মোতাবেক বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বিকৃত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অথচ এই বৃটেনই ১৭৫৭ সালে আমাদের স্বাধীনতা হরণ করে আমাদের গৌরব যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল। পরবর্তীতে এমন এক মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিল যার ফলে উক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিম যুবকগণ দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রে পরাজিত হয়। এমতাবস্থায় উক্ত মুসলিম বিদ্বেষী বৃটেনের প্রেসক্রিপশন আমাদের বিদ্যমান মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা সহজেই অনুমেয়। মহাজোট সরকারের ইসলামবিরোধী উক্তি ও কর্মকাণ্ড-
১. পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রয়েছে তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নেই। (সেমিনারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ডিজি, আমাদের দেশ ২৯.৩.২০০৯)
২. বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলো জঙ্গীবাদের প্রজনন ক্ষেত্র। (সেমিনারে আইনমন্ত্রী, দৈনিক সংগ্রাম ৯.৩.২০১১)
৩. ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ইসলামী শব্দটি বাদ দেওয়া উচিত। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নামে যা হচ্ছে তা ধোঁকাবাজি। (সূত্র : ঐ)
৪. বাংলাদেশে বিশেষ একটি ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার সিদ্ধান্ত জাতির জন্য অবমাননাকর। (সেমিনারে ডেপুটি স্পিকার, সূত্র : নয়া দিগন্ত, ৮.৯.২০১০)।
৫. বিগত ২০১০ সালের হজযাত্রীদের ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর বক্তৃতায়। (নয়া দিগন্ত, ২৪.১০.২০১০।
৬. এ সরকারের আমলে একজন শিক্ষক পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতা নিয়ে, কোরবানীর বিধান নিয়ে আপত্তি তুলে হাইকোর্টে রিট করার দুঃসাহস দেখিয়ে পার পেয়ে গেছে।
৭. আওয়ামী শিক্ষক ও চেম্বার জজের যোগসাজশে এ সরকারের আমলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়েছে।
৮. সরকার দলীয় ক্যাডারদের শিক্ষাঙ্গন দখল, ছাত্র ও শিক্ষক পেটানো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ইভটিজিং ও ধর্ষণের সেঞ্চুরির কারণে দেশের শিক্ষাঙ্গন, সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আজ বিপন্ন
৯. এ সরকার নিজ দলীয় গুন্ডা-পাণ্ডা-চোর-ডাকাত ও খুনীদের মামলা প্রত্যাহার করছে এবং দেশপ্রেমিকদেরকে নিত্য-নতুন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
১০.এ সরকার হিন্দু সংস্কৃতির মঙ্গল প্রদীপ, প্রতিকৃতি পূজা, মূর্তি স্থাপন কার্যক্রমকে দলীয় কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করেছে, ভারতীয় শিল্পীদের উলঙ্গ নাচ-গানের ব্যবস্থা করছে এবং ইসলামী সংস্কৃতির লালন ও বিকাশে বাধা দিচ্ছে।

এমতাবস্থায় আমরা দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, যদি ২৩ জুন মুভমেন্ট বর্তমানের ন্যায় নির্বিঘ্নে ও অব্যাহত গতিতে দেশ-জাতি ও ধর্মবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তবে আমরা অচিরেই ১৭৫৭ পরবর্তী বিপর্যস্ত অবস্থায় উপনীত হবো। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন আমরা প্রমে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারিয়েছিলাম, তৎপর আমাদের সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দেয়া হয়, তৎপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নামে আমাদের জমি কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে ভূমিহীনে পরিণত করা হয়, আমাদের চাপরাশী হিন্দু কর্মচারীদেরকে জমিদার করা হয়, এরপর আমাদেরকে সরকারি চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়, তৎপর তৎকালীন রাজভাষা পার্সীর পরিবর্তে ইংরেজি চালু করে আমাদেরকে অজ্ঞ মূর্খে পরিণত করা হয়। পাঠকবৃন্দ একটু খেয়াল করলেই বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝতে সক্ষম হবেন। ধরুন আগামীকাল থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পরিবর্তে হিন্দি করা হলো, অফিস আদালতের ভাষাও হয়ে গেল হিন্দি। এমতাবস্থায় আমরা কি আর সরকারি চাকরির উপযুক্ত হবো? আমরা কি শিক্ষিত হিসাবে গণ্য হবো? আমাদের বাংলা ভাষা ও বাংলা বইয়ের অস্তিত্ব কি অতীতের পার্সী ভাষা ও পার্সী বই এর ন্যায় হারিয়ে যাবে না? আমাদের বাংলায় লিখিত জাতীয় ইতিহাস-সাহিত্য কবিতা-উপন্যাস সুখ- দুঃখের কাহিনী কি হারিয়ে যাবে না? বাংলাভাষী জাতি হিসেবে আমরা কি হারিয়ে যাব না? অতএব সময় থাকতে ২৩ জুন মুভমেন্টকে থামাতে হবে। মনে রাখতে হবে, সময়ের এক ফোঁড়- অসময়ের সহস্র ফোঁড়। মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন।

সম্পাদকঃমাসিক ইতিহাস অন্বেষা।

No comments:

Post a Comment