আমদের ১২০০ বছরের গৌরবময় ইতিহাস ও সাহিত্য লুকায়িত রয়েছে আরবি, ফার্সি ও উর্দু গ্রন্থাবলীতে। কেননা ইংরেজ আমলের পূর্বে ফার্সিই ছিল জ্ঞান অর্জনের ভাষা এবং রাজ-ভাষা।
ইংরেজ আমলে শিক্ষার ভাষা এবং রাজ-ভাষা পরিবর্তন হয়ে ইংরেজি ভাষা চালু করা হয়। ফলে আরবি, উর্দু ও ফার্সি কিতাবসমূহ ধ্বংস হয়ে যায়, ধ্বংস করা হয় এবং মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাস বাংলা ভাষাভাষীদের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়।
ইংরেজগণ তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে মুসলমান কর্তৃক রচিত ইতিহাস গ্রন্থ ও সাহিত্যকে বিকৃত করে, ভেজাল মিশ্রিত করে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে এবং ইংরেজদের দালালবুদ্ধিজীবীরা উক্ত অনুবাদ গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করে দ্বিতীয়বার ভেজাল ও মিথ্যা তথ্য সংযোজন করেছে এবং আরবি, ফার্সি ও উর্দু গ্রন্থের রেফারেন্স বাংলা অনুবাদে উল্লেখ করেনি। ফলে বর্তমান প্রজন্মের মুসলমানগণ মনে করছে, যা কিছু শ্রেষ্ঠ ইতিহাস, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান সবই বুঝি ইংরেজি ও বাঙালি হিন্দুদের। পূর্বাপর মুসলমানরা নেহায়েত মুর্খ। এহেন হীনমন্যতাবোধ থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে ইতিহাস অন্বেষা।
ইঙ্গ-হিন্দু ষড়যন্ত্রে রচিত ইতিহাস গ্রন্থসমূহ এখনো বাছ-বিচারনা করে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেও কৃষ্টিসাং স্কৃতিক স্বাধীনতা অর্জন সুদূরপরাহত। এই সঙ্কট কাটাতে ইতিহাসের অন্বেষণ করতে হবে।
বর্তমানে ইসলামের ইতিহাস নামে যা পড়ানো হয় তা ইঙ্গ-হিন্দু রচিত মুসলমানদের ঝগড়া-ফ্যাসাদের ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস নয়। এর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী অভিলাষ চরিতার্থ করা হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্য- বর্তমান প্রজন্মের মুসলমানরা দেখুক যে, মুসলমানরা শতাব্দীর পর শতাব্দী শুধু আত্মকলহে লিপ্ত ছিল, ভালো কোনো কাজ করেনি। এমতাবস্থায় সঠিক ইসলামের ইতিহাস অন্বেষণ পূর্বক জাতির সোনালি অতীতকে অন্তর দিয়ে উপলব্ধির মাধ্যমে সমৃদ্ধ আগামী বিনির্মাণে ইতিহাস অন্বেষণ প্রয়োজন।
ইতিহাসবিহীন জাতি শিকড়হীন বৃক্ষের ন্যায়। মামুলি ঝড়ে তা অস্তিত্ব হারাবে। মাটির গভীরে প্রোথিত শক্তিশালী ও মজবুত ভিত্তিই সৌধের স্থায়িত্বের প্রধান শর্ত। অতীত ইতিহাস- ঐতিহ্যই একটি জাতির মূল ভিত্তি। একটি জাতির মূল যদি অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং সমৃদ্ধ অতীতাশ্রয়ী বর্তমানতার প্রকাশ ঘটে ভবিষ্যৎ পানে তবেই সে জাতির সুন্দর আগামী অবধারিত। এর বিপরীত হলে পতন অনিবার্য। কিভাবে একটি জাতি সমকালীন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে এবং কিভাবে একটি জাতি নিশ্চিহ্ন হয় তা একমাত্র ইতিহাসেই উল্লেখ রয়েছে। এ জন্য আমাদেরকে সঠিক ইতিহাস অন্বেষণ করতে হবে।
একটি দেশের অতীত আছে বলেই তার বর্তমানের স্বাধীনতামর্যাদা পায়। দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার একটি পুরাতত্ত্ব আছে, একটি অতীত রয়েছে এবং রয়েছে বর্তমানের সচলতা।একটি দেশ অকস্মাৎ সমুদ্রের মধ্যে দ্বীপের মতো জেগে উঠে না এ জন্য বাংলাদেশী জাতিসত্ত্বা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা তার অতীত ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করতে হবে।এ জন্যই ইতিহাস অন্বেষা প্রয়োজন।
সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রেও আমাদের ইতিহাস সচেতন হওয়াঅতি আবশ্যক। বাংলাদেশের বর্তমান সাহিত্যের ধারা পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও হিন্দু সংস্কৃতির বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত। উভয় সংস্কৃতির মূলে রয়েছে ভোগবাদ যা জিউস- আফ্রোদিতি বা রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের ভাবধারা সিক্ত। পক্ষান্তরে ইসলামী সংস্কৃতি ভোগবাদের বিপরীতে অবস্থিত। সমাজ সংস্কার ও বৃহত্তর মানবের কল্যাণ সাধনই ইসলামী সংস্কৃতির লক্ষ্য। সুতরাং বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে ইসলামী সাহিত্যের ইতিহাস জানতে হবে এবং চর্চা করতে হবে। এ জন্যই ইতিহাস অন্বেষা।
ইঙ্গ-হিন্দু রচিত ইতিহাস, স্বাধীনতার মহান নায়কদেরকে খলনায়ক/ভিলেন হিসেবে চিত্রিত করেছে। পক্ষান্তরে সাম্রাজ্যবাদের দালাল ও মুসলমানদের শত্রু স্থানীয়দেরকে নায়ক হিসেবে চিত্রিত করেছে। এমতাবস্থায় সঠিক বিষয় অবহিত হওয়ার জন্য ইতিহাস অšে¦ষা।
যে সাহিত্য আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি ধারণ করে না, যেসাহিত্যের নায়ক-নায়িকা আমরা নই, যে সাহিত্যের বিষয়বস্তু আমাদের নয়, যে সাহিত্যের চিন্তা-চেতনা-ভাবধারা-বৈশিষ্ট্য আমাদের নয়Ñ সে সাহিত্য আমাদের হয় কেমন করে? রাধা- কৃষ্ণ, মথুরা-বৃন্দাবন আমাদের মনে কোনো অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে না, আবার আলী-হামজা, মক্কা-মদিনা হিন্দুদের মনেও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে না। এমতাবস্থায় আমাদের সাহিত্যঅনুসন্ধান, রচনা ও চর্চার জন্য ইতিহাস অšে¦ষা।
আবুল মনসুর আহমদের ভাষায়- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীয় আকাশে কতবার শরতের চন্দ্রোদয় হয়েছে, তাতে শারদীয় পূজার ‘আনন্দময়ী মা’ কতবার এসেছে, গিয়েছে কিন্তু একদিনের তরেও সে বিশ্বের আকাশে ঈদ- মোহররমের চাঁদ উঠেনি, সে চাঁদ উঠবার ভার ছিল নজরুল ইসলামের উপর। এতে দুঃখ করার কিছুই নেই। কারণ এটাই স্বাভাবিক। কাজেই কঠোর সত্য, নজরুলের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে ইতিহাস অšে¦ষা।
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না, অথচ হিন্দু সাহিত্যের কোথাও একফোঁটা পানি নেই। সেখানে রয়েছে শুধু ‘জল’। এ জন্য আমাদেরকে আমাদের সাহিত্য রচনা করতে হবে।আমাদের সাহিত্যই হবে বাংলাদেশের জাতীয় সাহিত্য কেননা আমরা পানির সাথে ‘জল’কেও অবহেলা করি না। এ জন্যই ইতিহাস অন্বেষার আবির্ভাব।
No comments:
Post a Comment