Wednesday, December 21, 2011

জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্রের গডফাদারগণ(প্রথম প্রকাশঃ মাসিক ইতিহাস অন্বেষা,মে ২০০৯ সংখ্যা)

মে দিবস ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনসভায় দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন যে, “বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই অথচ সরকার জঙ্গিবাদের প্রচারণা চালিয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।” বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীও উক্ত দিবসে প্রায় একই প্রকার বক্তব্য রাখেন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশে জঙ্গি রয়েছে প্রচার করেন এবং জঙ্গি নির্মূলে সকল প্রকার বিকল্প অবলম্বনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বাংলাদেশের জঙ্গি দমনে টাস্কফোর্স গঠন, ভিন্ন রাষ্ট্রের সেনা-সহায়তা গ্রহণের কথা রীতিমতো ঘোষণা করছেন। উভয় শিবিরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে আমি বাংলাদেশের রাজনীতির স্বাভাবিক বুলি হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু পরদিন সরকারি বক্তব্যকে সমর্থন করে War for terror & Robbery লিপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি যখন বললেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গি আছে’। তখনই আমার টনক নড়ে। আমি বিলক্ষণ উপলব্ধি করলাম যেহেতু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও ক্ষমতাসীন সরকার বলছে জঙ্গি আছে, সেহেতু জঙ্গি না থাকার কোনো উপায় নেই। ক্ষমতাধররা নিজেদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণের জন্য নিশ্চয়ই জঙ্গি আছে প্রমাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে। অথবা সরকারি সংস্থা অথবা বন্ধু দেশ নিশ্চয়ই সরকারকে জঙ্গি আছে মর্মে তথ্য সরবরাহ করেছে। উভয় পক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে উৎসুক হয়ে আমি Terror,Terrorist, Terrorism   সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বিস্ময়াভিভ‚ত হলাম। আমার সংগৃহীত তথ্যের প্রকৃতি এমন যে, সুনির্দিষ্ট তথ্যসমূহ বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এবং তথ্যের পরিমাণ এরূপ যে, উক্ত তথ্যসমূহ দিয়ে দশ ফর্মার একটি বই লেখা যাবে। শেষ পর্যন্ত বই লেখার ব্যাপারটা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিয়ে প্রবন্ধের কলেবরে অতি সংক্ষেপে বিষয়টি উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম।
Terror/Terrorist/ Terrorism-এর সংজ্ঞা SAMSAD English-Bengali Dictionary ৫ম সংস্করণ থেকে প্রমে উক্ত শব্দত্রয়ের অর্থ উদ্ধার করলাম। উক্ত ডিকশনারীতে টেরর শব্দের অর্থ পেলাম সন্ত্রাস/ ভয়ঙ্কর ব্যক্তি, টেররিস্ট-এর অর্থ পেলাম সন্ত্রাসী/ সংঘবদ্ধভাবে ভয় দেখাইয়া বশ মানানোর রীতি/ সন্ত্রাসবাদ, টেররিজম-এর অর্থ করা হয়েছে আতঙ্কিত করা/ ভয় দেখাইয়া শাসন করা, ইত্যাদি। উক্ত শব্দার্থ দেখে মনের আয়নায় ভেসে উঠল কতগুলো নাম, যার মধ্যে কয়েকটি হলো-
হিটলার, মুসোলিনী, চেঙ্গিস খাঁ, হালাকু খাঁ, শ্যারন, বুশ, ইন্দিরা গান্ধী, নেতানিয়াহু, ডোনাল্ডস রামসফেল্ড, ওসামা বিন লাদেন, বাইতুল্লাহ মেহসুদ ও ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের ন্যায় ভয়ঙ্কর ব্যক্তিদের মুখ। উক্ত আতঙ্কবাদী ব্যক্তিগণ আবার দুই প্রকারের। প্রমোক্ত ৯ জন সন্ত্রাসবাদের স্রষ্টা আর শেষোক্ত ৪ জন সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি। বর্তমান বিশ্ব যেন স্রষ্টা ও সৃষ্টির যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করছে। এই স্রষ্টা সৃষ্টি সম্পর্কে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বিশিষ্টজনদের
বক্তব্য যাচাই করলাম।Terror/ Terrorist/Terrorism  সম্পর্কে বিশিষ্টজনদের অভিমত
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উলেøখ করা হলো :


১.আমেরিকার ইরাক-আফগানিস্তান আগ্রাসনকে সমর্থন করে না তারা টেররিস্ট, যারা  প্রতিরোধ করতে  চায়  তারা টেররিস্ট। যারা   ফিলিস্তিনে   ইসরাইলী দখলদারিত্ব প্রতিরোধ করতে  চায়  তারা টেররিস্ট,  যারা ভারতীয় দখলদারিত্ব থেকে  কাশ্মীরকে  মুক্ত করতে চায় তারা  টেররিস্ট।  যে সকল  দেশ সাম্রাজ্যবাদী  আগ্রাসন  প্রতিরোধ  করতে  চায় তারা  সন্ত্রাসী  রাষ্ট্র।  আরব-আফগান-মুসলিম যুবকরা যতদিন যক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থে রাশিয়ার দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করেছে ততদিন তারা ছিল মুজাহিদ কিন্তু বর্তমানে তারা যেহেত  পশ্চিমা দখলদারিত্বের  বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করছে সেহেতু তারা টেররিস্ট।(সূত্র : ওসমান খালিদ, লিসা জার্নাল, অক্টোবর-ডিসেম্বর-০৭, পৃ. ২০ ও ২৮)।


২. রিগ্যান প্রশাসনের এসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অব ট্রেজারী ও ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের সহযোগী সম্পাদক পল ক্রেইগ রবার্টস নিম্নোক্ত ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে টেররিস্ট-এর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
ক. ইরান, হিযবুল্লাহ, হামাস, টেররিস্ট। কারণ ইরান-হামাস ও হিযবুল্লাহর ন্যায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাহায্য করে।
খ. হামাস ও হিযবুল্লাহ টেররিস্ট, কারণ তারা অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের জুলুম, নির্যাতন ও আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করে।
গ. সে সকল দেশ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, যারা যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ থেকে টাকা নিয়ে উক্ত টাকায় অস্ত্র কিনে সিআইএ’র নির্দেশনা মোতাবেক ইহুদী ও মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে না বা করতে রাজী নয়।
ঘ. সে সকল দেশ টেররিস্ট, যারা নিজ দেশের বভিন্নি বাহিনী ব্যবহার করে নিজ দেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করতে রাজী নয়।
ঙ. আমেরিকা, ইসরাইল ও তার দোসরগণ যখন লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে তখন তা টেররিজম হয় না, আগ্রাসন প্রতিরোধ করাই টেররিজম। (সূত্র : লিজা জার্নাল, এপ্রিল-জুন ২০০৮)।


৩. ষাটের দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে অস্বীকার করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পার্টনার হওয়ার পর বর্তমানে ভারত কাশ্মীরী প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে আখ্যা দিচ্ছে টেররিস্ট নামে। ইরাক ও আফগানিস্তানের প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে আখ্যা দেয়া হচ্ছে টেররিস্ট হিসেবে।War on terror  একটি প্রচারণা মাত্র। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী স্থায়ী আধিপত্য কায়েমকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে মনে করে দেশসমূহকে ধ্বংস করা হচ্ছে, জনগণকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হচ্ছে। (ওসমান খালিদ, সম্পাদক, লিসা জার্নাল)।


৪. ইসলামিক টেররিজম মূলত ফিলিস্তিনি, আরব ও মুসলিম জনগণকে যন্ত্রণা দেয়া, ক্রোধান্বিত ও অপমানিত করার ফসল। এ যন্ত্রণা,ক্রোধ ও অপমানের তিনটি প্রধান কারণ হলো প্রথমতঃ সাধারণভাবে আমেকিরার শক্তি মদমত্ততা, দ্বিতীয়তঃ, জায়নবাদী ইসরাইলের প্রতি আমেকিরার অন্ধ সমর্থন, তৃতীয়তঃ বর্তমান আরব ও মুসলিম সরকারসমূহের শোচনীয় ব্যর্থতা। (এলান হার্ট, সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।


৫. ভারত আমেরিকার চেয়েও অধিক আওয়াজে ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। এর কারণ হিন্দু ভোট লাভ করা এবং খ্রিস্টান বিশ্বকে পাকি¯Íানের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করা। অথচ সত্যিকারভাবে হিন্দুত্ববাদ মুসলমানদের উপর অবিরাম আক্রমণ চালাচ্ছে, সমাজে মুসলমানদেরকে নিম্নতর শ্রেণীতে কোণঠাসা করে অপমান করছে। মুসলমানরাই ভারতে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের করুণ শিকার। মুসলমানরা ভারতে হিন্দু সন্ত্রাসবাদ কর্তৃক পরিকল্পিত ও সংঘটিত হত্যা এবং লুণ্ঠনের শিকার হচ্ছে। | (M.C. Raj, A Leading dalit Intellectual).


৬. ‘ভারতের ইহুদী’খ্যাত ব্রাহ্মণরা ট.ঝ. ডধৎ ড়হ ঞবৎৎবৎ-এর সুযোগ গ্রহণ করে ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু করেছে। ভারতে এমন কোনোদিন যায় না যেদিন ভারতের মুসলমানরা সন্ত্রাসের শিকার হয় না। সুতরাং বর্তমানে এটি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, ‘U.S. War on terror’  ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে পরিচালিত অমানবিক নৃশংস যুদ্ধ। (V.T. Rajshekar, India) সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির দৃষ্টিতে জঙ্গি হওয়ার এবং জঙ্গি রাষ্ট্র হওয়ার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ


১. মুসলমান হওয়া ও ইসলামের পক্ষের শক্তি হওয়া।


২. এমন দেশের অধিবাসী হওয়া যে দেশটির অবস্থান ভু- রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং যে দেশে তেল-গ্যাস রয়েছে।


৩. যে দেশের অধিকাংশ জনগণ স্বাধীনচেতা ও যে কোনো বহিঃশক্তির আধিপত্যের বিরোধী ও বৈদেশিক আগ্রাসন প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বা দোষসমূহ যেহেতু বাংলাদেশ ও এদেশের অধিকাংশ মানুষের মাঝে বিদ্যমান সেহেতু এদেশ যে জঙ্গিবাদীতে
পরিপূর্ণ তা বলা বাহুল্য।সাম্রাজ্যবাদী  শক্তির চোখে  যারা  জঙ্গি, সাম্রাজ্যবাদের পুতুল মাহমুদ আব্বাস,  হোসনী  মোবারক, নুরী আল মালিকী ও হামিদ কারজাইর চোখে তারা জঙ্গি হতে বাধ্য এবং উক্ত জঙ্গি দমনে প্রভু  দেশকে আমন্ত্রণ জানাতে পুতুল সরকার সমূহ কমিটেড। অপরদিকে ডিকশনারীর শব্দার্থের প্রতি মনোযোগ দিলে দেখা যায়, যারা আতঙ্ক সষ্টি করে, যারা সংঘবদ্ধভাবে ভয়  দেখাইয়া,  চোখ রাঙাইয়া অপরকে শাসন করতে চায়, অপরের  স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব-আমিত্ব- মর্যাদা-অস্তিত্ব বিলীন করতে চায় তারা সন্ত্রাসী, যারা দেশে দেশে রক্তাক্ত সন্ত্রাস রফতানি করে মানব জীবনকে অবর্ণনীয় দঃখ-দর্দশায় নিমজ্জিত করছে তারা  সন্ত্রাসী,  তাদের  এহেন  কার্যাবলীর  নাম টেররিজম।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান ‘ওয়ার অন টেরর’-এর কারণ ও অজুহাত বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, ওয়ার অন টেরর শুরু করার নেপথ্য কারণ হলো বিশ্বব্যাপী জায়নবাদী আধিপত্য বাস্তবায়ন করা। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-ইইউ জায়নবাদের বাহন বা ঘোড়া মাত্র। ওয়ার অন টেরর-এর প্রকাশ্য অজুহাত হলো মুসলিম নামধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক নাইন-ইলেভেনের টুইন টাওয়ার হামলা। অথচ বর্তমানে আমরা জানতে পেরেছি যেহেতু তেলসমৃদ্ধ ও ভু-গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম বিশ্ব দখল করা জায়নবাদীদের আপাতঃ টার্গেট সেহেতু সিআইএ-মোসাদ সৃষ্ট মুসলিম নামধারী সন্ত্রাসীদের দ্বারা টুইন টাওয়ার হামলা সংঘটিত করা হয়েছিল।


টইন টাওয়ার হামলার পোস্টমর্টেম:
১. ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল লন্ডন, ডিসেম্বর ২০০৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে ইসরাইলের মোসাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সিরীয় সীমান্তের বেকা উপত্যকায় লেবাননী সৈন্যরা আলী এবং ইউসুফ জারবাহ নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের নিকট থেকে অত্যাধুনিক গোয়েন্দা সরঞ্জামাদি ও তথ্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। উক্ত আলী ৯/১১ হামলার কথিত বিমান ছিনতাইকারী জিয়াদ আল জাররাহর চাচা। বৈরুতের আরবী দৈনিক সাফির-এর মতে, উক্ত ব্যক্তিদ্বয় ‘অপারেশন রোম’ এবং হিযবুল্লাহর সিনিয়র সামরিক কমান্ডার ইসমাইল মুগনিয়াকে লেবাননে গাড়ি বোমা দ্বারা হত্যার সাথে জড়িত ছিল। তদন্তকারীরা বলেছেন, সিরীয় সীমান্তে তৎপর ইসরাইলী মদদপুষ্ট ফিলিস্তিনি গ্রুপ ‘ফাতহুল ইনতেফাদা’র সদস্য ছিল উক্ত আলী ভ্রাতৃদ্বয়। (সূত্র : ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল লন্ডন, ডিসেম্বর ০৮ সংখ্যা)


২. নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি লিখেছে, জিয়াদ আল জাররাহর কাজিন আল জাররাহ ১৯৮৩ সাল থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ও হিযবুল্লার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতি তৎপরতা চালাচ্ছে। ইসরাইল নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে আরব-লেবাননী যুবকদেরকে অর্থের বিনিময়ে রিক্রুট করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিউইয়র্ক টাইমস আরও লিখেছে, টুইন টাওয়ারে হামলার খবরে ফ্লাইট-১১ এবং ফ্লাইট- ১৭৫ এর যাত্রী ৫ ইসরাইলী উল্লাস প্রকাশ করায় তাদেরকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। ৭১ দিন পর ইসরাইলী চাপে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। উক্ত ৫ জনের ২ জন মোসাদ-এর সার্ভিলেন্স টিমের সদস্য। হোয়াইট হাউসের নির্দেশে সিআইএ ৯/১১ ঘটনায় ইসরাইলী সম্পৃক্ততা আড়াল করেছে।


৩. ইতালীর স্থানীয় ‘কোরিয়ার ডে-লা-সেরা’ পত্রিকা লিখেছে, ‘ইতালীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফার্নেসকো কেসিগো বলেছেন, ৯/১১ এর ঘটনা মোসাদ-সিআইএ-এর যৌথ প্রযোজনার ফসল।


৪. ইসরাইলী টেলিকম ফার্ম ‘অভিগো’র সার্বক্ষণিক বার্তায় টুইন টাওয়ারে হামলার ২ ঘণ্টা পূর্বে বিষয়টি অবহিত হয়। ফলে ৯/১১ হামলার সময় কোনো ইহুদী টুইন টাওয়ারে ছিল না। এই হামলা সম্পর্কে ইসরাইলী সরকার আগে-ভাগে জানত বিধায় ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফর আকস্মিকভাবে বাতিল করা হয়। (সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম, ১১/০৫/০৯ইং) মার্কিন আগ্রাসী শক্তি ইতিপূর্বে কম্যুনিজম প্রতিরোধের নামে পৃথিবীর দেশে দেশে আগ্রাসন পরিচালনা করেছে। তখন মুসলিম কমরেডগণ ছিল মার্কিনীদের শত্রু আর ইসলামপন্থীরা ছিল মার্কিন বন্ধু। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রক্ত পিপাসু-যুদ্ধবাজ মার্কিনীদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে নতুন শত্রুর। কেননা রক্ত ও অস্ত্র ব্যবসাই মার্কিনীদের আজীবন পেশা। এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে কমরেডগণকে বন্ধু বানানো হয়েছে আর মুজাহিদদেরকে জঙ্গি আখ্যা দেয়া হয়েছে।


জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্রের সন্ধানে:
জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্রে মানুষ পয়দা করা হয় না। নিপিড়িত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত, দরিদ্র ও বেকার যবকদেরকে বিভ্রান্ত করে তাদের মধ্যে প্রতিশোধস্পহা জাগিয়ে  তোলা হয়, তাদের মনে রঙিন  স্বপ্নের আকাংখা জাগ্রত করা হয় এবং তাদেরকে অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষন দিয়ে দেশে দেশে সংঘাত সষ্টি করা হয়। উক্ত সংঘাত নির্মলের নামে জঙ্গিবাদের গডফাদারগণ সংশিøষ্ট দেশকে চাপ দিয়ে কাংখিত সুবিধা আদায় করে নেয় অথবা সংশিষ্ট দেশে হামলা করে জনপ্রাণী নিশ্চিহ্ন করে দেশের সকল  সম্পদ  ও  সম্ভাবনা  গ্রাস  করা  হয়  এবং  নিজেদের  আধিপত্য সম্প্রসারণ করা হয়।
স্যামুয়েল হান্টিংটনের সভ্যতার সংঘাত থিওরী রচনার পূর্বে এবং সিনিয়র বুশের Clash of Civilisation  ফেরি করার পূর্বে মুসলিম বিশ্বে কোনো জঙ্গি ছিল না ছিল শুধু ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধা ও কাশ্মীরী মুজাহিদ। উক্ত সভ্যতার সংঘাত তত্ত্ব বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ৯/১১ এর আয়োজন করা হয় এবং তারপর থেকে পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশ জঙ্গিময় হয়ে যায়। শুরু হয় সন্ত্রাসী দমনের নামে রক্তাক্ত আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের অবিরাম কার্যক্রম। নিজেদের সৃষ্ট জঙ্গি দমনের অজুহাতে জঙ্গির বাপ-দাদার ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমান ওয়ার অব টেরর-এর গডফাদার হলো জায়নবাদী ইহুদীরা এবং তাদের বরকন্দাজ হলো যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত এবং ইইউ। জঙ্গিবাদের লালন-পালন ও বিকাশে তাদের ব্যাপক ভু‚মিকার সংক্ষিপ্তসার এখানে উল্লেখ করা হলো।
সাম্রাজ্যবাদী দেশসমহের জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্রের ঠিকানা:


১. ২০০৪  সালের মাঝামাঝি বেলুচিস্তানের মখ্যমন্ত্রী জাম ইউসুফ বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বেলুচিস্তানের বিভিন্ন স্থানে৩০-৪০টি  জঙ্গি  ঘাটি  পরিচালনা  করছে।  ভারত  প্রত্যেক টেররিস্টকে  প্রতিমাসে১০  হাজার  টাকা বেতন  প্রদান  করে।২৯/১২/২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ বেলুচিস্তানের অস্থিতিশীলতা  সষ্টিতে  প্রতিবেশী দেশের  হাত  রয়েছে  বলে অভিযোগ করেন।
 (সূত্র : Dr. Mahboob Hossain, IndiaBehabior, (The Nation, Jan, 23, 06, See Also Muhammad Tahir, Tribes & Rebells The Players in the Balochistan Insurgencey (The James town Foundation, April-3, 08)


২. পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র মেজর জেনারেল শওকত সুলতান এবং তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী দুররানী ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ সালে মিডিয়াকে বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বিপুল পমিরাণ অর্থ ও অস্ত্র (যার মধ্যে ভ‚মি থেকে আকাশে নিক্ষেপ যোগ্য মিসাইল ও ১০৭ মি.মি. রকেটও রয়েছে) সরবরাহ করে বেলুচিস্তানকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। জেনারেল সুলতান আরো বলেন, আফগানিস্তানের কান্দাহারস্থ কনস্যুলেট ও ইরানের জাহিদানস্থ ভারতীয় কনস্যুলেট থেকে পাকিস্তানি জঙ্গিদেরকে ভারত অস্ত্র-শস্ত্র সরবরাহ করছে। ভিন্ন প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র তাসনীম আলম বলেন, ‘ভারত আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তান বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।’ (সূত্র : PTI- Weapon Supply routes to Balochistan sealed, Pak Govt. (The Hindu Sept. 5, 06) Hindustan Times, Sept. 5, 06/ Hindustan Times Sept. 8, 06 (The Jamestown Foundation, Nov. 16, 06)


৩. বালুচ লিবারেশন আর্মী নেতা আকবর বুগতি, বালাচ মারী এবং তেহেরিক তালিবান পাকিস্তান নেতা আব্দুল্লাহ মেহসুদ, তার কাজিন বাইতুল্লাহ মেহসুদ, আবদুর রশীদ গাজীসহ পাকিস্তানের বর্তমান আলোচিত জঙ্গি নেতৃবৃন্দের অস্ত্র-অর্থ, প্রশিক্ষনের দায়িত্ব পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-ইসরাইল-বৃটেন ও জার্মানী। ইসলামাবাদের লাল মসজিদে সেনাবাহিনীর অভিযানে ক্ষুব্ধ সাধারণ মুসলমানদের ক্ষবকে  কাজে লাগিয়ে উক্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ সাধারণ মুসলমানদেরকে জঙ্গি বানিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। উক্ত জঙ্গিদেরকে সরবরাহকৃত যোগাযোগ সরঞ্জাম পাকিস্তানকে সরবরাহকৃত যোগাযোগ সরঞ্জামের চেয়ে বেশি আধুনিক। উক্ত শক্তিসমূহ পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য আল কায়েদাসহ অন্যান্য ইসলামী আন্দোলনকে অস্ত্র-অর্থ সরবরাহ করছে। (সূত্র : The India Doctrine, 2nd edition 08, M.B.I. Munshi, page 592-93)


৪. <b>তাবলীগ জামাত ইন্ডিয়া ও ইসরাইল  :</b> নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াশিংটন থিংক ট্যাংকে কর্মরত একজন মার্কিন বিশ্লেষক তাঁর এক পাকিস্তানী বন্ধুকে এই মর্মে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠান যে, তাঁর ভাষায় “২০০৭ সালের শুরুতে আমার ইসরাইল সফরের সময় আমি জানতে পারি যে, ইসরাইল হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হাইফা শহরে একটি ইসলামী স্কুল অব ফিকাহ্ পরিচালনা করে। উক্ত শরীয়াহ (ফিকাহ্) স্কুলে ভারতীয় ও পাকিস্তানী বংশোদ্ভুদ মুসলমানরা প্রশিক্ষন নিয়ে তাবলীগ জামাতে শামিল হয়ে ভারতের বিভিন্ন মুসলিম সংস্থা ও মধ্য এশিয়ার মুসলমান সংস্থায় কাজ করে। আফগানিস্তানে ভারত-ইসরাইল কর্মকাণ্ডের অধীনে এ তৎপরতা পরিচালিত হয়।” (সূত্র : ঐ, পৃ. ৬০০)


৫. যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-বৃটেন-জার্মানীসহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ তাদের আফগানিস্তানে অবস্থিত ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানী উপজাতীয় এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষন দিচ্ছে। অনেক পাকিস্তানী ও আফগান তালেবান আত্মসমর্পণ করার পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে প্রধানত পাকিস্তানে হামলা পরিচালনা করার জন্য ভারতীয় ও আফগান কর্মকর্তারা আফগানিস্তানে প্রশিক্ষন শিবির পরিচালনা করছে।” (সূত্র : Happymoon Jacob, 24.3.07, www.orgonline.org)


৬. ২০০৮ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ভারতের Out Look Magazine -এর সাথে সাক্ষাতকারে ভারতস্থ ইসরাইলী রাষ্ট্রদূত মার্ক সোফার বলেন, “ভারত ১৯৮০’র দশক থেকে সিন্ধু প্রদেশে বিচ্ছিনড়বতাবাদী জঙ্গি চাষাবাদ কার্যক্রম চালু করেছে।”


৭. পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ও বাইরে বসবাসরত সিন্ধী হিন্দুদেরকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষন দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদে মদদ দিচ্ছে। ভারতীয় মদদপুষ্ট দল ‘Sindhu Desh Movement’ অর্থ দিয়ে সমর্থক ও অস্ত্র কিনে এবং  প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহের ছবি সরিয়ে এম কে গান্ধীর ছবি স্থাপনের কাজে নিয়োগ করে গরীব কৃষকদের। (সূত্র : The India Doctine, MBI Munshi, 2nd edition, Page 573-574)


৮. ভারত নিজ ভূখণ্ডে তামিল গেরিলাদল এলটিটিইকে প্রশিক্ষন দিয়ে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের পৃথক রাষ্ট্রের দাবিকে সমর্থন করে। (সূত্র : সুনীল জয়াশ্রী, The New Nation, June 10, 07)


৯. পাকিস্তানী, তিব্বতী, বাংলাদেশী ভিন্নমতবলম্বিদের ন্যায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ তামিলদের অতি গোপনীয় চক্রাথা’ সামরিক প্রশিক্ষন কেন্দ্রে প্রশিক্ষন প্রদান করে। (সূত্র : টি, সাবারত্তম, পিরাপাহারান, ভলিউম-১, চ্যাপ্টার-২৮)


১০. ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাশ্মীরী মুজাহিদদেরকে বিভ্রান্ত করে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কাশ্মীরীদের মধ্য থেকে জনবল সংগ্রহ করে জঙ্গি জিহাদী গ্রুপ গঠন ও পরিচালনা করে। (The India Doctrine Do, Page 571)


১১. জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি’র কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান ও বাংলাভাই এর গ্রেফতারের পর প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জেএমবিকে অস্ত্র, প্রশিক্ষন ও নিরাপদে সীমান্ত পারাপারের ব্যবস্থা করে। জেএমবি’র বিভিন্ন আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও বিস্ফোরকের গায়ে ভারতীয় সমরাস্ত্র কারখানার সীল ছিল। (সূত্র :Holiday, July 21, 06/ PROBE, June 15-21, 06)


১২. জেএমজি’র সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত হুজি-বি এর আমীর মুফতি হান্নান গ্রেফতার হওয়ার পর স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন যে, ‘সকল গ্রেনেড ভারত থেকে সরবরাহ করা হয়েছে।’ (সূত্র : PROBE, Feb. 16-22)


১৩.ইসরাইলের সহযোগীতায় ও পরামর্শে ভারত  ১৯৯০-এর  দশক থেকে  মসলমানদের  বিভিন্ন দল-উপদলে  ও  ধর্মীয় গোষ্ঠীতে অনপ্রবেশ করে সংঘাতময় পরিস্থিতি সষ্টি করে এবং উক্ত দল- উপদলের থেকে  জনবল  সংগ্রহ  করে  প্রশিক্ষন  দিয়ে ভেতরে  অনপ্রবেশ  করে।  বিংশ  শতকের  প্রথম  অর্ধাংশে ব্রিটিশ গোয়েন্দা  সংস্থা  ও  ইসরাইল  অনরূপ কৌশল   অবলম্বন করা শুরু করে, যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়।  (সূত্র :
The India Doctrine, Do, Page 600)


১৪.পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আসলাম বেগ (২৬.৩.০৮) পত্রিকায় Pakistanis Foil one Conspiracy, To check Another one is Afganistan শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ :
আফগানিস্তানে এংলো-আমেরিকান দখলদারিত্বের পর জাবাল- উস-সিরাজে C.I.A./RAW/MOSSAD/MI-6(বৃটেন) এবং BND (German Intelligence)  গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ সুবিশাল ও অত্যাধুনিক গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপন করে। উক্ত কেন্দ্র থেকে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারের  লক্ষ্যে ৪টি
আউটপোস্ট স্থাপন করা হয়। উক্ত ৪টি আউটপোস্ট হলো :


ক. : সারোবী এবং কান্দাহারের অগ্রবর্তী ঘাটি : সারোবীতে এর মূল কেন্দ্র অবস্থিত। এর অধীনে রয়েছে কান্দাহার, গজনী, খোস্ত,গারদেজ, জালালাবাদ, আসাদাবাদ, ওয়াখান ও ফয়েজাবাদ ঘাঁটি। সারোবী ঘাঁটির দায়িত্বে রয়েছেন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা, যিনি Border Road Organization (BRO)  পরিচালনা করেন। সারোবী কেন্দ্র থেকে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে জঙ্গি সরবরাহ করা হয়। পাকিস্তানের ভিন্নমতাবলম্বিদের প্রশিক্ষন দিয়ে  NWFP অঞ্চলে পাঠানো হয় নাশকতা সৃষ্টির জন্য। কান্দাহারের ঘাঁটির অধীনে রয়েছে লস্করগাহ ও নাওয়াহতে আরও ২টি ঘাঁটি। বালুচ ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রশিক্ষন দিয়ে বালুছিস্তানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও বালিচিস্তানের উপকুলের গভীর সমুদ্র বন্দর ‘গোয়াদর’ সানডাক ও হাবে চীন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পে বাধাদানের কাজে ব্যবহার করা হয়।


খ. ফয়েজাবাদ (বাদাখশান) ঘাটি :  এ ঘাঁটি থেকে চীন, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানে জঙ্গি সরবরাহ করা হয়।তাজিকিস্তান -উজবেকি¯Íান ও চীনের ঝিনঝিয়াং প্রদেশের ভিন্নমতাবলম্বী মুসলিম যুবকদেরকে অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষন দিয়ে জঙ্গিবানানো হয় এবং অপারেশনে পাঠানো হয়। ভারতের ৪০০ মুসলিম সৈন্য, বহু সংখ্যক প্রকৌশলী ও শ্রমিক এ কেন্দ্র পরিচালনা করে। উর্দুভাষী ভারতীয় মুসলিম উলেমারা এসব জঙ্গিদের মানসিক মোটিভেশনের কাজ করে এবং ধারণা দেয়া হয় যে, পাকিস্তানই এ ঘাঁটির সঙ্গে জড়িত। (সম্ভবতঃ ইসরাইল পরিচালিত হাইফার স্কুল অব ফিকাহর প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরাই এসব কেন্দ্রে মোটিভেশনের কাজ করে-লেখক)।
(বাংলাদেশের জেএমবি জঙ্গিদের মোটিভেশনেও আমরা ২ জন ভারতীয় উলেমার নাম জানতে পারি। তাদের একজন ২৪ পরগনার মাওলানা মহসিন ভাদরিয়া এবং অন্যজন বশিরহাটের মাওলানা আদল মাকিত ২৪ পরগনায়  ‘র’  পরিচালিত জেএমবির ৯টি প্রশক্ষিণ ঘাঁটরি সাথে জড়তি। -লেখক)।


গ.মাজার-ই শরীফ ঘাঁটি: তুর্কমেনিস্তান ও চেচনিয়ার ভিন্নমতাবলম্বীদের এ ঘাঁটিতে প্রশিক্ষন দিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ও রাশিয়ায় নাশকতার জন্য পাঠানো হয়। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার আফগান সহযোগী ওয়ারলর্ড রশীদ দোস্তাম ও আহমদ জিয়া মাসুদ এ কেন্দ্র থেকে উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ গোয়েন্দা ঘাঁটিটি C.I.A./RAW/ MOSSAD/ এবং BND (German)  যৌথভাবে পরিচালনা করে।


ঘ. হিরাত ঘাটি :  C.I.A./RAW/MOSSAD  যৌথভাবে এই ঘাঁটি
পরিচালনা করে। এ ঘাঁটির অধীনে ফারাহ ঘাঁটি এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কালামাত, জিওয়ানী ও মান্দ ঘাঁটি কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইরানের অভ্যন্তরে নাশকতা সৃষ্টির জন্যই মূলত এসব ঘাঁটিসমূহ ব্যবহৃত হয়। ইরানের অভ্যন্তরে তৎপরতায় লিপ্ত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘জান্দাল্লাহ’ হিরাত ঘাঁটির অধীনে কাজ করে। (তথ্য সূত্র:http://www.ahmedquraishi.com/ article_detail. php?id=252)


এংলো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পুতুল হামিদ কারজাই উপরোক্ত গোয়েন্দা ঘাটি (জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র)সমুহকে কনস্যুলেটের মর্যাদা দিয়ে একটি কটনৈতিক রক্ষাকবজ পরিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাবেদার সরকারসমহ এইভাবে জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র পাহারায় ও জঙ্গিগোষ্ঠী বিস্তারে প্রভুর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। যে সকল সরকার নিজ দেশে বিদেশী সেনাঘাটি স্থাপন করতে চায় তারা মলত শুধমাত্র ক্ষমতার লোভে নিজ দেশে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কর্তক জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করে।


১৫. পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। পাকিস্তানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্র। উক্ত ঘাঁটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অস্ত্র-অর্থ ও ট্রেনিং দিয়ে পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ব্যবহার করে। (সূত্র : উইলিয়াম আরকিন, ওয়াশিংটন পোস্ট, ডিসেম্বর ০৭)
১৬. পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্র পারভেজ মোশাররফ অথবা বেনজির ভুট্টোর মধ্যে একজনকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বেনজির নিহত হন। (সূত্র ঃ Larry Chin, Global Research, 29.12.07)


১৭. ১১ মার্চ ২০০৯ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আমেরিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টার পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সিমুর হার্শ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বুশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনী পরিচালিত ‘নির্বাহী আততায়ী চক্র’ বেনজির ভুট্টো, রফিক হারিরী ও লেবাননের সেনাপ্রধানকে হত্যা করে। আল কায়েদা কর্মী ওমর শেখ সাঈদ কর্তৃক ওসামা বিন লাদেনের নিহত হওয়ার খবর ফাঁস করায় বেনজিরকে এবং লেবাননে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনে অনুমতি না দেয়ায় প্রেসিডেন্ট হারিরী ও সেনাপ্রধানকে হত্যা করা হয়। শোষোক্ত ঘটনায় ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন জাড়িত ছিল। (সূত্র : দৈনিক আমার দেশ, ২০.০৫.০৯)
১৮. সিআইএ পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে পরিচালনা করে। আইএসআই আল কায়েদাকে সহায়তা করে প্রভুর নির্দেশে। সত্যিকার অর্থে আল কায়েদা সিআইএ’র Brain Child. (সূত্র : Michel Chossudovsky, Author, Global Research) (বেনজির, রফিক হারিরী ও লেবাননের সেনাপ্রধানের মৃত্যুর ঘটনা থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, যারা একবার সাম্রাজ্যবাদের দালালের খাতায় নাম লেখায় তাদেরকে প্রভুর নির্দেশে প্রভুর পালিত সন্ত্রাসী বা আততায়ী কর্তৃক নিহত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। উপরোক্ত তিনজনই সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খা মেটাতে নিজ দেশ ও জনগণের ব্যাপক ক্ষতি সাধনে লিপ্ত ছিলেন। বাংলাদেশের কেউ যদি শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে সাম্রাজ্যবাদের দালালের খাতায় নাম লিখিয়ে থাকেন তবে তাঁর বা তাদের পরিণতিও অনুরূপ হতে বাধ্য। কেননা, সাম্রাজ্যবাদের দৃষ্টিতে দালালগণ টয়লেট পেপার মাত্র। -লেখক)


সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জঙ্গি সংগ্রহের ক্ষেত্র সমুহঃ
সীমাহীন জুলুম, নির্যাতন, অপমান, লাঞ্ছনার শিকার ব্যক্তিরা যখন ন্যায়বিচারের জন্য কোনো আদালত পায় না, মাথা গোঁজার ঠাঁই পায় না, ক্ষব প্রকাশের পথ পায় না, আশা-ভরসা-সান্ত¡নার বাণী পায় না, তখনই উক্ত ব্যক্তিগণ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এজেন্টগণ এহেন ক্ষব্ধ ব্যক্তিদের আশ্রয় প্রদান, লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং তার ক্ষভকে বহুগুণ বর্ধিত করে অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষন দিয়ে প্রতিশোধমূলক কাজে লিপ্ত করায় এবং উক্ত ব্যক্তির নাম দেয় জঙ্গি। এ জন্যই দেখা যায়, অপরাধী যে ধর্মের, সম্প্রদায়ের বা দলের হোক না কেন সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ তাদেরকে আশ্রয় প্রদান করে এবং নিজের স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করে। জাতিগত বিরোধ, সম্প্রদায়গত বিরোধ, সাম্প্রদায়িক বিরোধ, ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতিগত বিরোধ, ধর্মীয় ও দলীয় বিরোধকে উস্কে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নেপথ্যে উভয়পক্ষ কে সহযোগিতা করে। ফলে উভয় পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোধগম্য হবে। ইরাক: ইরাকের নিহত প্রেসিডেন্ট ছিলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার Brain Child। বিশ্বশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থানের পর সাদ্দাম সিআইএ’র পক্ষপুটে আশ্রয় নেয়। সিআইএ ও মোসাদ-এর দিকনিদেশনায় সুন্নি সাদ্দাম নিজ দেশের শিয়া ও কুর্দীদের উপর অবর্ণনীয় জুলুম অত্যাচার করে। ক্ষব্ধ শিয়া ও কুর্দীরা সাদ্দামের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ দেশে ডেকে আনে এবং ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পতিত হয়। এ প্রসঙ্গে ০৬/০৫/২০০৯ইং তারিখে প্রচারিত Inside Story  অনুষ্ঠানে সাবেক জাতিসংঘ দূত লাখদার ব্রাহিমী বলেন, ইরাকের প্রতিটি মিলিশিয়া গ্রুপকে মদদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শিয়া-সুন্নি-কুর্দী দ্বন্দ্ব-সংঘাত উস্কে দিয়ে ইরাককে খণ্ডিত করা হচ্ছে। এক সময় শিয়াদেরকে শক্তিশালী করে সুন্নিদের উপর হামলা করাচ্ছে অন্য সময় সুন্নিবাদিদের শক্তিশালী করে শিয়াদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যবস্থা করছে। উক্ত অনুষ্ঠানে বিখ্যাত রিপোর্টার সিমুর হার্শ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নূরী আল মালিকীকে ভবিষ্যতের সাদ্দাম হিসেবে গড়ে তুলছে। আফগানিস্তানের বিগত দিনের ইতিহাস দেখুন। সেখানে সুন্নি  পশতুনরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সে দেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতো পশতুনরা। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করার লক্ষে সেখানকার জাতিগত সংখ্যালঘু তাজিক উজবেক ও শিয়াদের নিকট থেকে দালাল কমরেড সংগ্রহ করে এবং আফগানিস্তান দখল করে সংখ্যাগরিষ্ঠ পশতুনদের দেশ ছাড়া করে। সোভিয়েত শত্রু পশ্চিমা বিশ্ব ক্ষব্ধ-অপমানিত পশতুনদের অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষন দিয়ে এক সময় ক্ষমতায় বসায় এবং নিজ প্রয়োজনে পুনরায় সাবেক শত্রু জাতিগত সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায় বসায় এবং আফগানিস্তান দখল করে বর্তমানে অসংখ্য জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী জঙ্গি সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর দোষ চাপাচ্ছে ঢালাওভাবে ইসলামের উপর, শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের ঘাড়ে। পাকিস্তান, সুদান, সোমালিয়া, ইয়েমেন ও লেবাননের বেলায়ও একই ব্যবস্থা কার্যকর রেখেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি।


বাংলাদশে সাম্রাজ্জবাদরে জন্য কঠিন পরীক্ষাঃ
অন্যান্য দেশে যে প্রক্রিয়ায় জঙ্গি সংগ্রহ করা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা বাংলাদেশে কোনো জাতিগত, সম্প্রদায়গত, ধর্মীয়, ভাষাগত বিভেদ নেই। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করছে। এতদসত্ত্বেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এই একক জাতিসত্তাকে বিভাজন করার জন্য মতবাদগত অনৈক্য সৃষ্টি করেছে, যথাঃ ইসলামপন্থী- ধর্মনিরপেÿতাবাদী, বাঙালি-বাংলাদেশী। এই কৃত্রিম বিভাজন বর্তমানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রক্ত-ক্ষরণ ঘটাচ্ছে কিন্তু এরপরও পারস্পরিক বৈরিতাকে কাংখিত মাত্রায় উন্নিত করা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো একক জাতিসত্তা। এ জন্য দেখা যায়, ছোট ভাই মৌলবাদী হলেও বড় ভাই ধরমনিরেপক্ষতাবাদি, পিতা বাঙালী হলেও ছেলে বাংলাদেশী। ফলে এই কৃত্রিম বিভাজন দ্বারা ব্যাপক সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় জঙ্গি সংগ্রহের প্রচেষ্টায়
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যে সকল ষড়যন্ত্র করতে পারে তা নিম্নে :
১. দেশের প্রধান দুই জোটকে মদদ দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত করানো। (বি.দ্র. পাকিস্তান সরকারকে বালুচ লিবারেশন আর্মীকে দমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র এফ-১৬ সরবরাহ করেছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী মিত্র ভারত, বৃটেন, জার্মানী বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণন্নাস্র সরবরাহ করেছে বালুচ লিবারেশন আর্মীকে)।
২. বাঙালী ও ধরমনিরেপক্ষ গোষ্ঠীকে অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষন দিয়ে বাংলাদেশীদের উপর তীব্র হামলা পরিচালনা করতে পারলে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশীরা হয়তো সাম্রাজ্যবাদী জোটের কারো সহায়তায় রুখে দাঁড়াতে পারে।
৩. দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে দুরবিক্ষ-হাহাকার সৃষ্টি করতে পারলে ক্ষুধারথ মানুষের ক্ষভকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ক্ষুধার্তদের অন্ন, অস্ত্র, প্রশিক্ষন দিয়ে দেশবিরোধী কাজে নিয়োজিত করতে পারে।
৪. দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে বেনজির-রফিক হারিরী কৌশলে মাইনাস করে দেশকে অস্থিতিশীল করে জঙ্গি সংগ্রহ করতে পারে।
৫. পলাতক বিডিআর/ ক্ষুব্ধ সেনা পরিবার ও বিডিআর পরিবারের সদস্যদের ক্ষভকে উস্কে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কাজে লাগাতে পারে।
৬. নিরীহ মোল্লা-মওলবী, কওমী মাদ্রাসার তালেবানদের উপর মিথ্যাদোষ আরোপ করে তাদের উপর জুলুম-নির্যাতন করিয়ে জঙ্গি সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি।


বাংলাদশে জঙ্গি উৎপাদন কারখানা-কারাগার
মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদী ও হাজতীদের মুখে শুনেছি, জেএমবি’র যে সকল সদস্য বর্তমানে কারাগারে বন্দী আছে তারা সেখানে অবাধে সদস্য সংগ্রহ করছে। নিরপরাধ যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশ পুলিশের কল্যাণে হাজতী ও কয়েদী জীবন যাপন করছে তাদের ক্ষভকে পুঁজি করে তাদেরকে মোটিভেট করে জেএমবির সদস্য করা হচ্ছে এবং দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ জেল থেকে মুক্ত হওয়ার অর্থ সংগ্রহ করতে জেএমবির সদস্য হচ্ছে। কেননা, জেএমবি’র সদস্য হলে নাকি পরিবারের জন্য টাকা পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়। সরকারের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে জঙ্গি কাকে বলে, জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্রের ঠিকানা, জঙ্গিদের গডফাদার, War on Terror-এর স্বরূপ,War on Terror -এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা সম্যক অবগত হলাম।এমতাবস্থায় আমাদের সুন্দর-শান্তিপ্রিয় দেশটি যাতে জঙ্গিময় না হয়, আমরা যেন ইরাক-আফগানিস্তান-পাকিস্তানের ন্যায় অবস্থার শিকার না হই তার জন্য সময় থাকতে দল-মত নির্বিশেষে সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে সে আগুন এক সময় আমার ঘরেও লাগবে। আগুনের অসীম ধ্বংসলীলা থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।


জঙ্গবিাদ নির্মূলে করণীয়
১. জায়নবাদী ইসরাইল ও জায়নবাদকে প্রতিরোধ করা।
২. যেসব দেশ জঙ্গি উৎপাদন এবং সরবরাহে লিপ্ত রয়েছে তাদের কার্যক্রম ও দূতাবাসসমূহ কঠোর নজরদারিতে রাখা।
৩. দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা এবং সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে জাতীয় স্বার্থে সমঝোতা ও সমন্বয় সাধন।
৪. সকল দেশরক্ষা বাহিনীকে অধিকতর শক্তিশালী ও সজাগ করা।
৫. জাতীয় শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করে জাতিকে জানানো।
এমতাবস্থায় জঙ্গিবাদের গডফাদার দেশের পক্ষ থেকে যখন বলা হবে অমুক দেশে জঙ্গি আছে এবং সরকারও যখন সাম্রাজ্যবাদীদের সুরে সুর মিলিয়ে বলবে, দেশে জঙ্গি আছে তখন ধরে নিতে হবে উক্ত দেশে জঙ্গি আছে অথবা উক্ত দেশে পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যে একদল জঙ্গিকে প্রজনন কেন্দ্রসমূহে ট্রেনিং দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সময়-সুযোগ মতো অথবা সরকারের সহায়তায় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে উক্ত জঙ্গিদেরকে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে পুশব্যাক করা হবে। সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্ট ও পাঠানো উক্ত জঙ্গিরা যখন নিরীহ মানুষের উপর রক্তাক্ত হামলা পরিচালনা করবে সংশ্লিষ্ট তাবেদার সরকার তখন জঙ্গি হামলার অজুহাতে নিজ দেশের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ব্যক্তি ও দলকে নিশ্চিহ্ন করার কাজ শুরু করে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ থেকে উক্ত দেশকে বাঁচানোর নামে এবং নিজেদের সৃষ্ট জঙ্গি দমনের অজুহাতে গডফাদার দেশসমূহ সংশ্লিষ্ট দেশে সসৈন্যেহাজির হয়ে দেশ দখল, তাবেদার সরকার রক্ষা, গণহত্যা ও লুণ্ঠন শুরুকরবে। এই হলো War on Terror-এর নামে War for Terror &
Roberry’র অনুসৃত নীতি।
এস.এম. নজরুল ইসলাম।
সম্পাদকঃ মাসিক ইতিহাস অন্বেষা ।
০১৭১১৭২০৯২৩

No comments:

Post a Comment